অনলাইন ডেস্ক :
লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন তার কার্যালয় ত্যাগ করেছেন। রোববার (৩০ অক্টোবর) মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেই তিনি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ত্যাগ করেন। ২০১৬ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভয়বাহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও বৈরুত বিস্ফোরণের মতো সংকটের মধ্যেই লেবাননকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আউন। রয়টার্স বলছে, এখন পর্যন্ত আউনের উত্তরসূরী নির্ধারণের বিষয়ে একমত হতে পারেনি লেবাননের পার্লামেন্ট। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যেকোনো বিলে সই করে সেটিকে আইনে পরিণত করার ও নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার ক্ষমতা রয়েছে প্রেসিডেন্টের। তাছাড়া, কোনো দলকে সরকার গঠনের অনুমতিও দেন প্রেসিডেন্ট। আউনের শাসনামলের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে একটি তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা লেবাননকে শাসন করেছে। এ মন্ত্রিসভার মনোনীত প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি ছয় মাস ধরে দেশটিতে সরকার গঠনের চেষ্টা করছেন। লেবাননের অনেকেই আউনকে বিভেদ সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট বলে অভিহিত করে থাকেন। এদিকে, দেশটির খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী তাকে নিজেদের একজন শক্তিশালী সমর্থক বলে দাবি করে। তবে আউনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার ও হিজবুল্লাহ’র মতো সশস্ত্র বাহিনীকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে হিজবুল্লাহ ও এটির প্রতিপক্ষ ম্যারোনাইট খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর রাজনীতিক সামির গেগা’র সঙ্গে সুন্নি নেতা সাদ আল-হারিরিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনার চুক্তিসাপেক্ষে ক্ষমতায় আসেন মিশেল আউন। আউন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ২০১৭ সালে দেশটির সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহর সহায়তায় সিরিয়া সীমান্তে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ২০১৮ সালে লেবাননের পার্লামেন্টে নতুন একটি নির্বাচনী আইন পাস করানো হয়। এছাড়া, ২০২০ সালে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জ¦ালানি কোম্পানিগুলো লেবাননের ভৌগলিক সীমানায় থাকা ভূমধ্যসাগরে অনুসন্ধানমূলক খনন শুরু করে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ সপ্তাহে আউন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় ইসরায়েলের সঙ্গে ঐতিহাসিক সমুদ্রচুক্তিতে সই করেন। যদিও ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেননি তিনি। অনেকেই আউনকে সফল প্রেসিডেন্ট দাবি করলেও অধিকাংশের লেবানিজের মতে, ২০১৯ সালে লেবাননে যে আর্থিক বিপর্যয় দেখা দেয় তাতে দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছেন। এমন বিপর্যয় দেশটিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া বলা হয়, বৈরুত সমুদ্রবন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২২০ জন নিহতের ঘটনায় আউনের প্রশাসনকে প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করা হয়। ওই ঘটনার পর আউন জানান, তিনি জানতেন যে সেখানে দাহ্য রাসায়নিকের মজুত রয়েছে। গতকাল রোববার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দেশটির অর্থনৈতিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা আমার ছিল না। ১৯৭৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধে লেবানন আর্মির কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আউন। পরবর্তীকালে পরষ্পর বিরোধী দুটি সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ সুগম হয় বৈরুতের একটি সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া আউনের।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু