নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ রেলওয়ে বন্ধ থাকা ট্রেনগুলো চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে না। আর ট্রেন বন্ধ থাকায় শুধু যাত্রীরাই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না, রেলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রেনগুলো বন্ধ রাখার কারণ হিসেবে রেলওয়ে বরাবরই বলছে ইঞ্জিন ও কোচের (বগি) অভাবের অজুহাত দেখাচ্ছে। এমনকি ওই সঙ্কট কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত বন্ধ ট্রেনগুলো চালু করা যাবে না বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অথচ করোনা মহামারির আগে ও পরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বহরে ৩০টি নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন ওই অঞ্চলে ইঞ্জিনসংখ্যা ১৫৯টি। কিন্তু তার একটি অংশ নিয়মিতই বিকল থাকে। সেজন্যই দিনে ১০০-এর বেশি ইঞ্জিন পাওয়া যায় না। তাছাড়া ২০২০-২০২১ সালে রেলওয়ে দেড়শ মিটারগেজ কোচ আমদানি করে। তবে নতুন ইঞ্জিন ও কোচ যুক্ত হওয়ার পরও এই সময়ে একটি লোকাল ট্রেনও চালু করা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বল্প দূরত্বের যাত্রায় লোকাল ট্রেনই নিম্নবিত্ত মানুষের ভরসা বেশি। ওসব ট্রেন প্রয়ি প্রতিটি স্টেশনেই থামে। ওসব ট্রেন থেকে আয় খুব একটা কম হয় না। কিন্তু নানা কারণে লোকাল ট্রেন চালানোয় রেলওয়ের আগ্রহ নেই। বরং একের পর এক বন্ধ হচ্ছে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন। কর্তৃপক্ষের নতুন করে সেগুলো চালু করার দিকে মনোযোগ নেই। বরং রেলওয়ে আন্তঃনগর ট্রেন নিয়েই বেশি মনোযোগী। বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে ১৪টি রুটে ৪২টি লোকাল ট্রেন বন্ধ। নানা অজুহাত দেখিয়ে সেগুলো চালু করা হচ্ছে না। বন্ধ থাকা ট্রেনগুলোতে (লোকাল, মেইল ও কমিউটার) প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যাত্রী চলাচল করতো। এখন ওসব ট্রেন না থাকায় রেলের আয়ও কমে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেলওয়ে যাত্রী পরিবহন ও আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে, তার চেয়ে ২৫ শতাংশ যাত্রী কমেছে। তাতে আয় কমেছে ৩২ শতাংশ।
সূত্র জানায়, করোনার কারণে বিগত ২০২০ সালের মার্চে সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে কিছু ট্রেন চালু হয়। আর বিধিনিষেধ পুরোপুরি উঠে গেলে ১৪৬টি ট্রেন চলাচল শুরু করে। কিন্তু ৪২টি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন আর চালু হয়নি। একসময় রেলওয়ে পূূর্বাঞ্চলে ১৮৮টি ট্রেন চলাচল করতো। তার মধ্যে ৪৮টি আন্তঃনগর ট্রেন। অবশিষ্ট ১৪০টি ট্রেনের মধ্যে ১৬টি পণ্যবাহী ট্রেন এবং ১২৪টি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন। ওসব ট্রেনের মধ্যে ৪২টি এখন বন্ধ। তার মধ্যে রয়েছে ৬টি মেইল ট্রেন, ১৪টি লোকাল ট্রেন ও ২২টি কমিউটার ট্রেন। রেলওয়ের লোকাল ট্রেনগুলো একেবারে লক্কড়ঝক্কড় ইঞ্জিন ও কোচ দিয়ে চালু করা হয়েছিল। ওসব ইঞ্জিনের আর কার্যক্ষমতা নেই। পুরোনো অনেক কোচও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেজন্য লোকাল ট্রেনগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে বন্ধ থাকা ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচলকারী জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ঈশাখাঁ এক্সপ্রেস, আখাউড়া-সিলেট রুটে চলাচলকারী কুশিয়ারা এক্সপ্রেস, লাকসাম-চাঁদপুর রুটের চাঁদপুর কমিউটার, লাকসাম-নোয়াখালী রুটের নোয়াখালী কমিউটার, ঢাকা-জয়দেবপুর রুটের কালিয়াকৈর কমিউটার, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটের নারায়ণগঞ্জ কমিউটার, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটের নাজিরহাট কমিউটার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী কমিউটার ট্রেন, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটের ৪টি লোকাল ট্রেন, ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ রুটে চলাচলকারী দুটি লোকাল ট্রেন, ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রুটের ৪টি লোকাল ট্রেন এবং সিলেট-ছাতকবাজার রুটের ৪টি লোকাল ট্রেন।
এদিকে ট্রেন বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চেšধুরী জানান, লোকাল ট্রেনগুলোতে সাধারণত গরিব লোকজন চলাচল করে। ওসব ট্রেন উপজেলা কিংবা গ্রামাঞ্চল থেকে শহর-নগরীকে যুক্ত করে। একসময় গ্রামের মানুষ ওসব ট্রেনে করে কর্মস্থলে যাতায়াতের পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য শহরে নিয়ে যেতে পারতো। বর্তমানে ওসব ট্রেন বন্ধ থাকায় গরিব লোকজন ওই সুযোগ থেকে এখন বঞ্চিত। রেলওয়ে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু ট্রেনই যদি বন্ধ থাকে তাহলে এত প্রকল্প দিয়ে কী হবে?
অন্যদিকে ট্রেন বন্ধ থাকার বিষয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রেলে ইঞ্জিন ও কোচের সংকট রয়েছে। অনেক দিন জোড়াতালি দিয়ে অনেক ট্রেন চালানো হয়েছে। কিন্তু এখন অবস্থা এমনই যে নতুন ইঞ্জিন ও কোচ না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকা ট্রেনগুলো চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনগুলোতে সাধারণত গরিব লোকজন চলাফেরা করে। সেজন্য ওসব ট্রেন দ্রুত ফের চালু করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ