November 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 22nd, 2022, 7:05 pm

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২৫২

এপি, ইন্দোনেশিয়া :

ন্দোনেশিয়ার প্রধান দ্বীপ জাভাতে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২৫২ জনে পৌঁছেছে। এছাড়াও এখনও কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়ে চিকিসাধীন রয়েছেন।

মঙ্গলবার উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া বাড়িঘর এবং ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও মৃতদেহ খুঁজে পেতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

এর আগে সোমবার বিকালে দেশটিতে পাঁচ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে এই প্রাণহানি ও বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে।

উদ্ধারকারী দল আরও ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে পশ্চিম জাভা প্রদেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ শহর সিয়াঞ্জুরে পৌঁছেছে। সোমবার বিকালের ভূমিকম্পে আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসে। যাদের অনেকে রক্তাক্ত ও ধ্বংসাবশেষে আহত ছিল।

ভূমিকম্পের পরবর্তী ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, সেতু এবং বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউট এবং ভারী যন্ত্রপাতির অভাবের কারণে ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকারীদের কাজে বিঘ্ন ঘটে। ভূমিধসের কারণে রাস্তাগুলো অবরুদ্ধ হয়ে যায় এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি এবং গাড়িচালককে চাপা দেয়।

মঙ্গলবার ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ফোন যোগাযোগের উন্নতি হতে শুরু করেছে।

পশ্চিম জাভা গভর্নর রিদওয়ান কামিল নিহতদের সংখ্যা ঘোষণার সময় বলেন, প্রত্যন্ত, গ্রামীণ এলাকায় বিল্ডিং ধসে পড়ার সময় সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকে তাদের সেদিনের ক্লাস শেষ করে ইসলামিক স্কুলে অতিরিক্ত পাঠ নিচ্ছিল।

হাসপাতালগুলো আহতদের দ্বারা পূর্ণ হয়েছিল এবং এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। বড় গ্রামীণ এলাকাটির জনসংখ্যার কারণে তাৎক্ষণিকভাকে ক্ষয়ক্ষতির কোনও ধারণা পাওয়া যায়নি। অনেকগুলো অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ফলে এলাকার বাসিন্দা এবং জরুরি কর্মীরা ভয়ঙ্কর সংবাদের জন্য প্রস্তুত ছিলেন।

পাবলিক ওয়ার্কস অ্যান্ড হাউজিং মুখপাত্র এন্ড্রা আত্মাভিদজাজা বলেছেন, উদ্ধার কার্যক্রমে সিয়াঞ্জুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। কারণ এই সকল এলাকায় বেশি মানুষ এখনও আটকে আছে বলে ধারণা করা হয়।

আত্মাভিদজাজা বলেন, ‘আমরা মানুষকে উদ্ধার করার জন্য সময় নিয়ে দৌড়াচ্ছি,’ গাছ এবং মাটি দ্বারা সিয়াঞ্জুর এবং সিপানাস শহরের সংযোগকারী অবরুদ্ধ রাস্তাগুলোকে পরিষ্কার করতে পার্শ্ববর্তী বান্দুং এবং বোগর শহর থেকে সাতটি খননকারী এবং ১০টি বড় ট্রাক মোতায়েন করা হয়েছে।

রাজধানী জাকার্তা থেকে খাদ্য, তাঁবু, কম্বল এবং অন্যান্য সরবরাহ বহনকারী কার্গো ট্রাকগুলো অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণের জন্য মঙ্গলবার ভোরে পৌঁছায়। তারপরও আবারও ভূমিকম্পের ভয়ে খোলা জায়গায় রাত কাটিয়েছে হাজারো মানুষ।

পার্শ্ববর্তী জেলায় ইসলামিক শিক্ষা ফাউন্ডেশনে কর্মরত দ্বি সারমাদি বলেন, ‘বিল্ডিংগুলো সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে।’

সিয়াঞ্জুর শহরে আনুমানিক এক লাখ ৭৫ হাজার মানুষ বাস করে। যেটি পার্বত্য ২৫ লাখ মানুষের জেলার অংশ। তারা ধার্মিক হিসেবে পরিচিত। সিয়াঞ্জুরের বেশিরভাগ মানুষ শহরের একতলা বা দোতলা বাড়িতে বাস করেন।এছাড়া আশেপাশের গ্রামাঞ্চলেও ছোট বাড়িতে থাকেন তারা।

কামিল বলেছেন যে ১৩ হাজারেরও বেশি লোকের বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরকে সরিয়ে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জরুরি কর্মীরা হাসপাতালের বাইরে, টেরেস এবং পার্কিং লটে স্ট্রেচার এবং কম্বলে আহতদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। শিশুসহ আহতদের অক্সিজেন মাস্ক এবং আইভি লাইন দেয়া হয়েছে।

শত শত মানুষ সিয়াঞ্জুর আঞ্চলিক হাসপাতাল ভবনের বাইরে জড়ো হয়ে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে।

সারমাদি বলেন, ‘আমি আমার অফিস বিল্ডিংয়ের ভিতরে কাজ করছিলাম। ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তবে ভূমিকম্পে খুব প্রবলভাবে কেঁপে উঠলে অনেক কিছু পড়ে যায়। এতে আমার পায়ে ভারী জিনিসের আঘাত লেগেছে।’

সারমাদি হাসপাতালের বাইরে একটি তাঁবুর কাছে ক্লিনিকে তাকে দেখতে না পেয়ে অনেক লোক অপেক্ষা করছিলেন। অনেক লোক খারাপ অবস্থায় আসছিল।

তিনি বলছিলেন, ‘আমি সত্যিই আশা করি তারা শিগগিরই আমার সঙ্গে আলোচনা করতে পারবে।’

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, পাঁচ দশমিক ছয় মাত্রার ভূমিকম্পটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের নীচে ১০ কিলোমিটার (ছয় দশমিক দুই মাইল) গভীরে ছিল। এটি বৃহত্তর জাকার্তা অঞ্চলে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। প্রায় তিন ঘন্টার দূরবর্তী জায়গা থেকে উঁচু-নিচু জায়গাগুলো দোলা দিয়েছিল এবং কিছু লোককে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।

সিয়াঞ্জুরের অনেক বাড়িতে, কংক্রিটের টুকরো এবং ছাদের টাইলস বেডরুমের ভিতরে পড়েছিল।

ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া, জলবায়ুবিদ্যা, এবং ভূ-পদার্থবিদ্যা সংস্থা কমপক্ষে ২৫টি কম্পন রেকর্ড করেছে।

২৭০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের দেশটি প্রায়শই ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং সুনামিতে আক্রান্ত হয়। কারণ এটি ‘রিং অফ ফায়ার’ নামে পরিচিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেসিনে আগ্নেয়গিরি এবং ফল্ট লাইনের চাপে অবস্থিত।

ফেব্রুয়ারিতে, পশ্চিম সুমাত্রা প্রদেশে একটি ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে কমপক্ষে ২৫ জন নিহত এবং ৪৬০ জনেরও বেশি আহত হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে, পশ্চিম সুলাওয়েসি প্রদেশে ৬ দশমিক ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে একশ’র বেশি লোক নিহত এবং প্রায় সাড়ে ছয় হাজার জন আহত হয়।

২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামিতে বেশ কয়েকটি দেশে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিল ইন্দোনেশিয়ায়।