নিজস্ব প্রতিবেদক :
সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিপুল পরিমাণ মেডিকেল যন্ত্রপাতি নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু তীব্র জনবল সঙ্কটে ওসব অতিপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি মেরামত দুরূহ হয়ে উঠেছে। করোনা মহামারীকালে সরকারি হাসপাতালই সাধারণ মানুষের মূল ভরসার জায়গা। আর দেশের সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সচল রাখার দায়িত্ব পালন করে ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার। সংক্ষেপে তাকে বলা হয় নিমিউ অ্যান্ড টিসি। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র ৭ জন স্নাতক প্রকৌশলী ও ৪ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী রয়েছে। ওই সীমিত কারিগরি জনবল দিয়েই চালাতে হচ্ছে সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল যন্ত্রপাতির মেরামত কাজ। ফলে কাক্সিক্ষত ও মানসম্পন্ন সময়ভিত্তিক সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটিও নিজেদের জনবল সঙ্কটকেই প্রধানতম চ্যালেঞ্জ মনে করছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ১৯৮৩ সালে সচল মেডিকেল যন্ত্রপাতি, নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা রূপকল্প নিয়ে ৮৩ জন জনবল নিয়ে সংস্থাটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩-৯৪ সালে সংস্থাটিতে আরো ১২ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির মোট জনবল ৯৫ জনে উন্নীত হয়। তারপর আর জনবল বাড়ানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অথচ যখন সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন সেবার চাহিদার পরিমাণও ছিল সীমিত। কিন্তু গত ৩৬ বছরে সেবার চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। বিশেষ করে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে প্রথম ধাপ থেকেই ওই প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। নিমিউ অ্যান্ড টিসি দেশের প্রথম কভিড-১৯ ডেডিকেটেড কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে আইসিইউ ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন প্লান্টসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি সুপারভিশনের দায়িত্বে ছিল। তাছাড়া অন্যান্য কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালেও প্রতিষ্ঠানটি যন্ত্রপাতি ইনস্টলেশনের দায়িত্ব পালন করেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মেডিকেল যন্ত্রপাতি মেরামত গত আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি নিমিউ অ্যান্ড টিসির জনবল। অথচ সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার চাহিদা ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়েছে। সেজন্যই নিমিউ অ্যান্ড টিসির বিদ্যমান জনবল ও সক্ষমতা দিয়ে কাক্সিক্ষত মাত্রায় সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে ওই পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ করতে বাইরের প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ওয়ারেন্টি পিরিয়ড পার হলে অনেক মেডিকেল যন্ত্রপাতি সচল করতে আবার নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করতে হয়। তাতে অর্থ ব্যয় হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সামান্য কিছু ত্রুটি সারিয়েই একটি মূল্যবান মেডিকেল যন্ত্রপাতি সচল করা সম্ভব। কিন্তু নিজস্ব জনবল না থাকায় ওসব টুকটাক ত্রুটি সারিয়ে না তুলে বছরের পর বছর মূল্যবান মেডিকেল যন্ত্রপাতি ফেলে রাখা হয়। তাতে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হয়। স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্টদের মতে, মেডিকেল যন্ত্রপাতি মেরামতে সরকারিভাবে আরো জনবল নিয়োগ দেয়া হলে বেতন-ভাতা খাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, তার চেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যাবে।
সূত্র আরো জানায়, নিমিউ অ্যান্ড টিসিতে জনবল সংকট কাটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত জটিল আকার ধারণ করায় গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ওই আবেদন করে নিমিউ অ্যান্ড টিসি। তাতে বলা হয়, নভেল করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট মহামারী পরিস্থিতি জরুরি মোকাবেলার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে নিমিউ অ্যান্ড টিসিতে জনবল নিয়োগের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে পিএসসির মাধ্যমে ১০০ জন গ্র্যাজুয়েট বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার ও ৭৩৫ জন ইলেক্ট্রো-মেডিকেল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করা প্রয়োজন। দেশের ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটিতে একজন করে ১৭ জন সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে প্রতিটিতে ৩ জন করে মোট ৫১ জন প্রয়োজন। তাছাড়া ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রতিটিতে একজন করে সহকারী প্রকৌশলী ও ৩ জন করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রয়োজন। আর দেশের ৬১টি জেলা হাসপাতালের প্রতিটিতে ২ জন করে মোট ১২২ জন, ৫১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা টিবি হাসপাতাল কিংবা মা ও শিশু হাসপাতালের প্রতিটিতে একজন করে মোট ৫১৭ জন নতুন জনবল প্রয়োজন। পাশাপাশি নিমিউ অ্যান্ড টিসির প্রধান কার্যালয়েও ৬৮ জনের নিয়োগের কথা আবেদনে বলা হয়। তবে আবেদনের ওই বিষয়ে অগ্রগতি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নিমিউ অ্যান্ড টিসির চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার (উপ-সচিব) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জানান, নিমিউ অ্যান্ড টিসিতে প্রয়োজনীয় সব পদে জনবল নিয়োগের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। আর জনবল নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম