নিজস্ব প্রতিবেদক:
জামিনে থাকা ভয়ঙ্কর অপরাধীদের নজরদারিতে গঠিত হচ্ছে পুলিশের বিশেষ মনিটরিং সেল। ওই সেল সারাদেশের ভয়ঙ্কর অপরাধীদের তথ্য ভা-ার গড়ে তুলবে। দেশের প্রতিটি জেলায় ওই সেলের শাখা অফিস থাকবে এবং রাজধানী ঢাকায় ওই সেলের প্রধান অফিস থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিব বিশেষ মনিটরিং সেলের প্রধান হবেন এবং তাতে ডিআইজি পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তা থাকবেন। আর আইন মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা করবে। খুব শিগগির বিশেষ মনিটরিং সেলের কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জামিনে বেরিয়ে গা-ঢাকা দেয়া ভয়ঙ্কর অপরাধীরা পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে। অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। শতাধিক ভয়ংকর অপরাধী গত এক বছরে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে গেছে। জামিন নিয়ে বের হয়ে যাওয়া ওই ধরনের অপরাধী কারা কখন কিভাবে বের হয়ে কোথায় আছে তার কোন তথ্য পায় না পুলিশ। যেসব ভয়ংকর ধরনের অপরাধী জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে আছে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ডাকাত, মাদক কারবারি, চোরাকারবারি ধরনের দুর্ধর্ষ অপরাধী। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলো তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন।
সূত্র জানায়, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দুর্ধর্ষ অপরাধীরা কে কখন কিভাবে জামিনে মুক্ত হয়ে কোথায় অবস্থান করছে ওই তথ্য পাচ্ছে না। অপরাধীরা কিভাবে জামিন পাচ্ছে তাও জানে না। সংস্থাগুলোর নজরের বাইরেই থাকছে অপরাধীদের কে কখন জামিন নিয়ে আত্মগোপন করছে বা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাতে গুরুতর ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়া আশঙ্কা রয়েছে। ওই ধরনের আশঙ্কা থেকেই বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেলটি গঠন হলে বিশেষ সুবিধায় কোনো অপরাধী জামিন পাচ্ছে কিনা, জামিন পাওয়ার পর ওসব আসামি কি করছে এবং মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছে কিনা ওসব বিষয় জানাএবং তদারকি করার সুযোগ থাকবে। কতজন তালিকাভুক্ত অপরাধী জামিনে রয়েছে এবং তাদের সর্বশেষ অবস্থাও তদারকি করবে বিশেষ ওই মনিটরিং সেল। কারণ প্রতিদিন দেশের মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও জেলাগুলোর জজ আদালত থেকে কে কখন জামিন পাচ্ছে ওই হিসাব নিয়মিত রাখা হচ্ছে না। বিশেষ দুর্বলতার কারণে জামিনের দৈনন্দিন পরিসংখ্যান রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সমন্বয় ও নজরদারি না থাকায় একাধিক মামলার আসামি একটি মামলাতেই জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে
এদিকে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দুর্ধর্ষ অপরাধীরা জামিন পাচ্ছে কিনা তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিংয়ে সরকারি আইনজীবীদের আরো সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আইন মন্ত্রণালয়কে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেও অনুরোধ করা হয়। ওসব বৈঠকে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত আসামি, দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও তালিকাভুক্ত অপরাধীদের মধ্যে কতজন জামিনে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুনির্দিষ্টভাবে তার হিসাব নেই। এমনকি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কতজন নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছে আর কতজন গা ঢাকা দিয়েছে তাও কেন্দ্রীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলো জানতে পারছে না।
অন্যদিকে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, ভয়ংকর দুর্বৃত্ত, দুর্ধর্ষ জঙ্গি, তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, একাধিক মামলার আসামি ও মাদক কারবারি, স্মাগলারসহ গুরুতর ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। ওসব অপরাধী জামিনে বের হয়ে আবারো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ সরকারবিরোধীদের সঙ্গে মিলে দেশে নানা নাশকতা চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। অপরাধীরা কারাগার ছাড়ার আগে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আগাম তথ্য পাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও বিশেষ কারণে তা পাচ্ছে না। আদালতের সরকারের নিয়োগ করা আইনজীবী থেকে শুরু করে কারাগারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে আসামিরা বেরিয়ে যাচ্ছে। যেসব দাগি অপরাধী জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে গেছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পুরনো পেশায় সক্রিয় আছে বলে তথ্য এসেছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ