জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাকা ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। তবে সরকারি অনুমোদনের তোয়াক্কা করছেন না ভবন মালিকরা। এতে নির্মাণ ত্রুটিসহ কোনো অঘটন হলে আইনি জটিলতায়ও পড়তে হতে পারে ভবন মালিকেদের।
স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার বাইরে গ্রামে বসতঘর নির্মাণের আগে সরকারি নির্দেশনা ও বিধি-বিধান জারি আছে। পাকা ও আধাপাকা ভবন নির্মাণের আগে উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই নির্মাণ হচ্ছে এসব বসতবাড়ি।
উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসতবাড়ির প্ল্যান অনুমোদন বিষয়ক কমিটি আছে। তবে এ পর্যন্ত ১০টি ইউনিয়নে বাড়ি নির্মাণের আগে হাতেগোনা কয়েকজন অনুমোদন নিয়েছেন। অথচ ধারণার চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণ নির্মাণ হয়েছে পাকা-আধপাকা বাড়ি।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র ফারুকুল হক জানান, পৌর এলাকার অভ্যন্তরে বাড়ি নির্মাণের আগে অনুমোদন নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। যে কোন স্থাপনা নির্মাণের আগে অনুমোদন নেয়া হচ্ছে কিনা তা তদারকি করছেন আমাদের কর্মকর্তারা। আমরা অনুমোদন ছাড়া কোন স্থাপনা নির্মাণ হতে দিবনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবন নির্মাণের আগে প্ল্যানসহ উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। এর সঙ্গে সরকারের নির্ধারিত ফি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই বাড়ি নির্মাণে অনুমোদনের বিষয়ে এখনো জানেন না। আবার অনেকে জেনেও গড়িমসি করছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন অনেকে। কেউ কেউ অনুমোদন নিতে গিয়ে ভোগান্তির অভিযোগও তুলেছেন।
মুল্লাপুরের বাসিন্দা আবুল হোসেন সাহেদ বলেন, ‘গ্রামে নতুন ঘর নির্মাণে সরকারি অনুমোদন নিতে হয় তা জানা ছিল না। স্থানীয় মিস্ত্রি দিয়ে ঘর নির্মাণ করেছি। এ বিষয়ে কেউ তদারকিও করতে আসেনি।
চারখাইয়ের বারইগ্রামের বাসিন্দা সফি খান বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে পাকা ভবন নির্মাণ করেছি। কেউ জিজ্ঞাসা করতে আসেনি। এখন শুনছি নির্মাণ ত্রুটিসহ কোনো অঘটন হলে আইনি জটিলতায় পড়তে হবে। এখন ইউনিয়ন থেকে যোগাযোগ করে অনুমোদন নেবো।’
মেওয়া গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন বলেন, ‘বাড়ি নির্মাণের আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়েছি। এখন শুনছি উপজেলা পরিষদের অনুমোদনও নিতে হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা দেবো।
মোতাহের হোসেন নামের এক আবেদনকারী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়েছি। উপজেলা পরিষদ থেকে পাস পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে আবেদনকারীরা কিছুটা ভোগান্তির শিকার হন।’
কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তুতিউর রহমান তুতা বলেন, বাড়ির মালিকদের অনেককে বলা হলেও তারা এ ব্যাপারে উদাসীন।
মুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ বলেন, গ্রাম পর্যায়ে নতুন বসতঘর নির্মাণে সরকারি অনুমোদন নিতে হয় তা অনেকেই জানেন না। তারা স্থানীয় মিস্ত্রি দিয়ে ঘর নির্মাণ করছেন।
স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, বাড়ি করার ক্ষেত্রে অনুমোদন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে অগ্নিনির্বাপণে বাড়িতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের পথসহ যেকোনো দুর্ঘটনারোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিম বলেন, একটি পাকা স্থাপনা প্ল্যান মাফিক নির্মাণ করতে হয়। সেখানে গ্রাম পর্যায়ে প্ল্যান ছাড়া ও অনুমোদন না নিয়েই স্থাপনা নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে ভবন নির্মাণ কমিটির কার্যক্রম জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব বলেন, সরকারি অনুমোদন ছাড়া বাড়ি নির্মাণ করলে পড়ে যেকোনো ধরনের আইনি জটিলতায় পড়তে হবে। এজন্য বাড়ির মালিকদের অনুমোদনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু তাই নয়, অনুমোদন নেওয়ার বিধি কার্যকর করতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদেরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি