তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম দুই দিন আগে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম দাড়িয়েছে এক হাজার ৪৯৮ টাকা।
এই দামেও বাজারে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়েছে খুলনার বাজারে। নির্ধারিত মূল্যের বেশি দিয়ে কিনতে হবে প্রতি সিলিন্ডার।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি দরের চাইতেও ১০০/১৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে গ্যাস। দাম নিয়ে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।
এদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে এলপি গ্যাসের বাজারে সংকট চলছে। ২৬৬ টাকা দাম বাড়বে- এই সংবাদ আগাম জানতে পেরে বাজার থেকে গ্যাস সরিয়ে ফেলে কোম্পানিগুলো।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুলনা শহর ছাড়াও আশপাশের পৌরসভা, উপজেলা ও গ্রামে বিপুলসংখ্যক মানুষ এলপিজির ওপর নির্ভরশীল।
আরও জানা যায়, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এ সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।
গত বৃহস্পতিবার বিইআরসি এক বিজ্ঞপ্তিতে এলপিজির দাম একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এতে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৪৯৮ টাকা, যা জানুয়ারি মাসে ছিল এক হাজার ২৩২ টাকা।
সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। তবে তা সব জায়গায় কার্যকর হতে দেখা যায় না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অভিযোগ জানাতে বলা হয়।
নগরীর গোবরচাকা এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন জানান, সরকার ২৬৬ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করেছে দেড় হাজার (এক হাজার ৪৯৮) টাকা। কিন্তু দোকানে কিনতে গেলে দাম চাইছে এক হাজার ৭০০ টাকা। অনেক তর্কবিতর্কের পরে ৫০ টাকা কমে এক হাজার ৬৫০ টাকায় গ্যাস কিনেছি।
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মুন্না জানান, তিনিও ১৫০ টাকা বেশি দিয়ে এক হাজার ৬৫০ টাকায় গ্যাস কিনেছেন।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও এক হাজার ৬০০ টাকার নিচে গ্যাস নেই। কোথাও এক হাজার ৬৫০, কোথাও এক হাজার ৭০০ টাকায়ও গ্যাস বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হাসান জানান, সরকার পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য ৪০/৫০ টাকা মুনাফা রেখেই দাম নির্ধারণ করে। অর্থ্যাৎ ব্যবসায়ীরা যদি ১৪৯৮ টাকায় গ্যাস বিক্রি করে, তাতেও তাদের ৫০/৬০ টাকা প্রতি সিলিন্ডারে লাভ থাকে।
কিন্তু এই লাভে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেন না। খুচরা ব্যবসায়ীরা আরও ১০০/১৫০ টাকা লাভ করতে চান।
তিনি বলেন, মাত্র ১৪০০ টাকা বিনিয়োগ করে ১৫০/২০০ টাকা মুনাফা খোঁজার যে লোভ-এটাই গ্রাহকদের পকেট ফাঁকা করে দিচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।
বটিয়াঘাটার মোহাম্মদনগর এলাকার বাসিন্দা আকরামুল ইসলাম বলেন, তাঁর পাঁচ সদস্যের পরিবারে মাসে দুই সিলিন্ডার এলপিজি লাগে। এতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, গত মাসে তিনি প্রতি সিলিন্ডার (১২ কেজি) গ্যাস কিনেছেন ১৩৫০ টাকা দিয়ে। এখন ১ হাজার ৬৫০ টাকা চাইছে।
সরকার নির্ধারিত দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি দাম বললে দোকানদারেরা অপমান করেন। তারা বলেন সরকারের কাছ থেকে কিনতে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক