নিজস্ব প্রতিবেদক:
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে বেশকিছু পণ্যের দাম। বিশেষত, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের পর এবার আগুন লেগেছে মাছের বাজারে। গত সপ্তাহ থেকেই অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। সেই উত্তাপ এখন ছড়িয়েছে মাছের আড়তে। প্রকারভেদে চাষের মাছ কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি পদের (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ডিম-মাংসের পর মাছের দাম বাড়ায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। রাজধানীর মালিবাগ বাজারের মুদি দোকানি সাইফুল্লা বলেন, আগে কম দামে ডিম-ব্রয়লার কিনতাম। গত সপ্তাহে দাম বেড়েছে। এখন দেখি মাছের দামও বেড়েছে। আমরা খাবো কী? যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের বেঁচে থাকাই কঠিন। সাধ থাকলেও সন্তানের মুখে মাছ-মাংস দিতে পারছি না। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পুষ্টি ঘাটতি বাড়ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙ্গাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা এখন ১৭০-২০০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। যা আগে ১৮০-২০০ টাকায় কেনা যেতো। আমিষের চাহিদা পূরণে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষে ব্রয়লার মুরগি ও পাঙ্গাস-তেলাপিয়া মাছের ওপর বেশি নির্ভরশীল। মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে সীমিত আয়ের মানুষ বাজা গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। খিলগাঁও রেলগেট বাজারে আসা রিকশাচালক মজনু মিয়া বলেন, গতকাল শুক্রবার দিনটিও যে ভালো-মন্দ খাবো সে উপায় নেই। নিরামিষ খেতে খেতে জীবন ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। মাছ কিনতে যদি ৫০ টাকা বেশি লাগে, তাহলে অন্য সদাই না কিনে ঘরে ফিরতে হয়। একই বাজারের মাছ বিক্রেতা সুরুজ মিয়া বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি, মাছের দামও বাড়ছে। মাছের ফিডের (খাবার) এখন খুব চড়া দাম। খামারিরা এজন্য দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে পাইকারি বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। এমনকি সরবরাহ ভালো থাকলেও ইলিশের দাম চড়া। সামুদ্রিক চিংড়ি ও রূপচাঁদা মাছেরও দাম বেশি। এ বিক্রেতা জানান, তার দোকানে প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়। যা আগে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো। এ ছাড়া প্রতি কেজি ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি। এক কেজির বেশি ওজনের কয়েকটি তাজা ইলিশ, যা দেড় হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ওই ধরনের মাছ সপ্তাহখানেক আগেও এক হাজার ২০০ টাকার কাছাকাছি ছিল। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া ছাড়াও অন্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। অন্যদিকে বাজারে দেশি প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি ও বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০০-৬৫০ টাকার মধ্যে। তবে এসব প্রজাতির চাষের মাছের দাম তুলনামূলক কিছুটা কম। কারওয়ান বাজারের একটি মাছের দোকানের বিক্রেতা জালাল মিয়া বলেন, মাংস ও মুরগির দাম বাড়ার প্রভাব মাছের বাজারেও পড়েছে। সে কারণে আড়তে দাম বেড়েছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি এখন ২০০-২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, এ দাম গত সপ্তাহ থেকেই চড়া। দেশি মুরগির কেজি চাওয়া হচ্ছে ৪৫০-৫২০ টাকা। গরুর মাংসও কেজিপ্রতি ২০-৫০ টাকা বেড়ে এখন ৭২০-৭৫০ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৩৫-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে আরও ৫-১০ টাকা বেশি দামে। প্রতি হালি ডিম কোথাও কোথাও ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতেও দেখা গেছে। তবে ফার্মের সাদা ডিমের দাম কিছুটা কম। অন্যদিকে হাঁসের ডিমের ডজন এখনো ২১০-২২০ টাকা।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি