November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, February 20th, 2023, 9:57 pm

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বন্ধ হচ্ছে না মাদকের বিস্তার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদকের বিস্তার ঘটছেই। মাদক বিরোধী সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিও তাতে তেমন প্রভাব ফেলছে না। বরং দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই মাদক বিস্তারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশের ভয় না থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটছে। আর মাদকাসক্ত অনেক শিক্ষার্থীই সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। কারো কারো অসমাপ্ত থাকছে শিক্ষা জীবন। এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা মাদক ব্যবসা করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এর সঙ্গেআইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির কর্মকর্তারাও জড়িত। ফলে অভিযানে মাদক বহনকারীরা ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে আসল গডফাদাররা। বিশেষজ্ঞ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দিন দিন মাদকের চাহিদা বাড়ছেই। জিরো টালারেন্স ঘোষণা, জরিমানা, গ্রেপ্তার করেও তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বরং বানের জোয়ারের মতো আসছে মাদক। ডোপ স্টেট করে চাকরি প্রবেশ করানো হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার। বরং এখন ঘরে ঘরে ইয়াবা। এ ব্যাপারে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র-ছাত্রীও কম নয়। এমনকি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তাদের অনেকেই মাদকাসক্ত। আর মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি স্ট্রোকের হার সর্বাধিক। তাছাড়া তারা বদমেজাজ, চরম অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা, অসংলগ্ন ব্যবহার, হ্যালুসিনেশন, ভুলে যাওয়া, দুর্বলচিত্ততা এবং হতাশা ইত্যাদি মানসিক বিকারের শিকার হয়। সূত্র জানায়, মাদক বিস্তারের অন্যতম কারণ মাদক প্রাপ্তির সহজলভ্যতা। সিনিয়রদের প্ররোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক নবীন শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। স্বল্পমূল্যে ক্যাম্পাসেই মাদক মিলছে। আর একের পর এক ব্যয়বহুল মাদকের সঙ্গে যুক্ত হতে হতে মাদকাসক্তদের কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যাচ্ছে। বিচ্ছেদ ঘটছে পড়াশোনার সঙ্গে। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কৌশলে কোকেন, গাঁজা, মদ, মারিজুয়ানা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হিরোইন, প্যাথিডিন, সিসা, সিরিঞ্জের মাধ্যমে নেওয়া মাদক, ঘুমের ওষুধ, এলএসডি ইত্যাদি মাদকদ্রব্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ ও বিস্তার ঘটাচ্ছে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে এর সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর শিক্ষক-কর্মচারীরাও। বড় ক্যাম্পাসগুলোতে বহিরাগতরা সন্ধ্যা হলেই মাদকের আসর বসে। মাদকাসক্ত বন্ধুদের প্ররোচনায় শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশই মাদক গ্রহণ করে। তারপর ব্যয়বহুল প্রাণঘাতী মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাছাড়া মাদকাসক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে এন্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি, শৈশবে বিকাশে সমস্যা, পারিবারিক কোলাহলও দায়ী। মাদকাসক্তদের মধ্যে নিষ্ঠুরতার কার্যক্রম বেশি। সূত্র আরো জানায়, মাদকাসক্তি রুখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও সুশীল সমাজসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ জরুরি। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানও অব্যাহত রাখতে হবে চালাতে হবে। সীমান্ত দিয়ে মাদক আসার পথ বন্ধ করতে হবে। আর যারা আসক্ত তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণায় প্রমাণিত মাদকাসক্তদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি সর্বাধিক। তাদের নার্ভগুলো ডেমেজ হয়ে যায়। ব্রেণ ক্ষয় হয়ে যায়। ডিমেনশিয়া বা মতিভ্রম হয়। অল্প বয়সে নিউরোপ্যথি রোগ। অর্থাৎ সে চলাফেরা করতে পারে না। সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে ফেলে যৌন ক্ষমতা। মাদকাসক্তদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। মাদকাসক্তির কারণে ওই ধরনের রোগ নিয়ে প্রচুর শিক্ষিত তরুণ রোগী হাসপাতালে যাচ্ছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন জানান, র‌্যাব সর্বাধিক পরিমাণে মাদক উদ্ধার করছে, গ্রেপ্তার করছে এবং চার্জশিটও দিচ্ছে। কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। মাদক তরুণদের অন্যতম ঘাতক। এর বিরুদ্ধে অল-আউট অভিযান চালাতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না। আসলে চাহিদা বন্ধ না হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। ঘর থেকেই সচেতন হতে হবে। সেক্ষেত্রে পিতা-মাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।