জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে একটি বৃহৎ উপজেলা হলো কুলাউড়া। সেই উপজেলায় একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আছে। তাও সেটি ভাঙ্গাচোরা। এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে গেছে যে কোনো মেরামতের কাজই যথেষ্ট হবে না। অন্যদিকে নতুন করে একটি শহীদ মিনারের অর্থ বরাদ্দও এসেছে। টেন্ডারও হয়েছে। কিন্তু জায়গা সংক্রান্ত জটিলতা ও সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে শহীদ মিনারের কাজ। এর দায়ও কেউ নিতে চাচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুলাউড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। কয়েক যুগ আগে তৈরি করা হয়েছে শহীদ মিনারটি। এরপর আর বড় ধরণের সংস্কার করা হয়নি। শুধু ফেব্রুয়ারী মাস আসলে রং করা হয়ে থাকে। শহীদ মিনারটি নির্মিত হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটিও এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই জানান, বর্তমানে যেখানে শহীদ মিনার আছে সেখানেই আমরা মডেল শহীদ মিনারটি চাই। আর দেরি না করে ও শহীদ মিনার নিয়ে রাজনীতি না করে সেখানে শহীদ মিনারটি করলে সবার ভালো হবে।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কুলাউড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্মাল্য মিত্র সুমন জানান, কুলাউড়ার আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু শহীদ মিনার। কুলাউড়ার সকল সংস্কৃতি প্রেমীদের দাবী ছিল একটি আধুনিক ও বৃহৎ শহীদ মিনার নির্মাণ। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, জেলা পরিষদ কর্তৃক বরাদ্দকৃত টাকায় নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য টেন্ডার হলেও স্থান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনকি দেরি হলে টাকা ফিরেও যেতে পারে।
কুলাউড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম. মছব্বির আলী বলেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই শহীদ মিনার স্থাপনের দাবি ওঠে। কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই আশ্বাস দেয়। কিন্তু শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এটা মনে রাখা উচিত যে একটি শহীদ মিনার শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতীক।
কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, কুলাউড়ায় একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারের জন্য জেলা পরিষদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ঠিকাদার নিয়োগ ও সাইট ঝুঝিয়ে দেওয়ার। কোন জায়গায় শহীদ মিনার হবে এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলা পরিষদ যেহেতু শহীদ মিনার করবে তাই এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই তারা ভালো বলতে পারবে।
কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান বলেন, শহরের স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের পাশে পাবলিক লাইব্রেরীর জায়গায় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অচিরেই শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খোদেজা খাতুন বলেন, ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে বৃহৎ একটি শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য জায়গা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান খুব শীঘ্রই হচ্ছে। জেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় জায়গা জটিলতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব জানিয়েছে, খুব দ্রুত কুলাউড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, পৌরসভার মেয়র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মিছবাহুর রহমান বলেন, আমরা শহীদ মিনারের জন্য ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদারও নিয়োগ করেছি। কিন্তু শহীদ মিনারের জায়গা নিয়ে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে শহরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দক্ষিণপার্শ্বের পরিত্যক্ত পাবলিক লাইব্রেরীর জায়গায় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেটির ড্রয়িং ও ডিজাইন শেষ করা হয়েছে। অচিরেই কাজ শুরু করা হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি