অনলাইন ডেস্ক :
এখন থেকে আর ডলারে লেনদেন করতে পারবেন না ইরাকি নাগরিকরা। এ নিষেধাজ্ঞা অমাণ্য করলে গুনতে হবে ১০ লাখ ইরাকি দিনার জরিমানা, হতে পারে কারাদ-ও। সম্প্রতি বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞা দেয়। বিদেশি মুদ্রার অনুমোদিত হার ও কালোবাজারের হারের মধ্যে বড় ব্যবধান ইরাকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে জনমনে ব্যাপক অসন্তাষ সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জনগণের উদ্দেশে বলে, দিনার ইরাকের জাতীয় মুদ্রা।
বিদেশি মুদ্রা বাদ দিয়ে দেশি মুদ্রায় লেনদেন দেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতিকে জোরদার করবে। ভিন্ন মুদ্রায় লেনদেনকে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ মনে করিয়ে দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, কোনো ব্যক্তি ইরাকি দিনার ও অর্থনীতির ক্ষতির চেষ্টা করলে তাকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল বলছে, বাগদাদজুড়ে ও অন্য শহরগুলোর বাজারে অভিযান চালাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংগঠিত অপরাধ প্রতিরোধ অধিদপ্তর। শুধু দিনারে পণ্য বিক্রির জন্য হলফনামায় ব্যবসায়ীদের সই নেওয়া হচ্ছে। হলফনামা লঙ্ঘনকারীদের কারাদ-ের পাশাপাশি ১০ লাখ ইরাকি দিনার (প্রায় ৬৮০ ডলার) জরিমানা হবে বলেও জানান তিনি। তৃতীয়বার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সেই জরিমানা দ্বিগুণ করা হবে। এ অধিদপ্তরের অপারেশন বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসেইন আল তামিমি বলেন, দিনারের মান রক্ষা করাই এ অভিযানের মূল লক্ষ্য। এতে ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা প্রতিনিধিরাও সাহায্য করছেন।
ইরাকি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ নিষেধাজ্ঞার পর ইরাকে ডলারের লেনদেন একেবারেই কমে যায়। গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তারের ভয়ে শুধু বিশ্বস্ত গ্রাহকদের কাছে ডলার বিক্রি করছে কালোবাজারিরা। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ, তারপর জাতিসংঘের কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের ফলে ইরাকি দিনারের যথেষ্ট অবমূল্যায়ন ঘটে। ফলে দিনার ছেড়ে মার্কিন ডলারের দিকে ঝোঁকে ইরাকিরা। পাইকারি থেকে খুচরা- সব পর্যায়েই ডলারের লেনদেন ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে, মুদ্রাসংকটের কারণে পণ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় বিক্ষোভ নামেন ইরাকিরা। এ সংকট কাটাতে ছয় মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে দেশটির সরকার।
গত নভেম্বরের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক লেনদেন কঠোর করার পর ইরাকি দিনার আরও অস্থিরতার মুখে পড়ে। দিনার-সংকটের পেছনে ওয়াশিংটনের হাত রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত নিলামের মাধ্যমে ইরান, সিরিয়া ও লেবাননে ডলার পাচার করা হচ্ছে। ইরান ও সিরিয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এদিকে, ইরাক থেকে আন্তর্জাতিক লেনদেনে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক লেনদেনের অনেকগুলো অনুরোধ বাতিল করেছে ও কিছু ঝুলিয়ে রেখেছে। এর ফলে ইরাকে মার্কিন ডলারের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ