October 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, May 28th, 2023, 9:46 pm

পরিবেশ ছাড়পত্রের জটিলতায় ক্ষতি গুনছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পরিবেশ ছাত্রপত্রের জটিলতায় আর্থিক ক্ষতি গুনছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। নতুন পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুযায়ী চট্টগ্রামের সীতাকু- উপকূলে গড়ে ওঠা জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলো স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছ থেকে দুই দফায় ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ জটিলতায় ব্যবসায়ীরা গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে ৪৫টি জাহাজ কাটতে পারছে না। ফলে ব্যাংক ঋণ নিয়ে আমদানি করায় ওসব স্ক্র্যাপ জাহাজে দৈনিক ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার মতো ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। আর দুই মাসে সেই ক্ষতির পরিমাণ ১৯০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাহাজ ভাঙ্গা ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে দেশে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টনের ৪৫টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করেছে। এতে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তরে ২১ দিন পরপর অনুষ্ঠিত সভায় জাহাজ ভাঙ্গার ছাড়পত্র দেয়া হয়। কোনো কারণে এক সভায় ছাড়পত্র নিতে না পারলে পরের সভার জন্য আরো তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে এ দীর্ঘসূত্রতার কারণেই গত দুই মাসে ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ কাটিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাতে ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন ৭ লাখ টাকা ব্যাংককে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাতে ৪৫টি জাহাজের জন্য ইয়ার্ডগুলোর দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে বড় আকারের আরো ৩টি স্ক্র্যাপ জাহাজ এসেছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে।

তাছাড়া কাজ না করালেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে। তাতেও বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যবসায়ীরা। সূত্র জানায়, গত দুই মাসেরও বেশি কোনো জাহাজই কাটার অনুমোদন দেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর। স্ক্র্যাপ জাহাজগুলো সাধারণত ব্যাংকঋণ নিয়ে কেনা হয়। এমনকি কাস্টমসের নিয়ম মেনে প্রবেশের পরই সৈকতায়ন করতে হয়। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রায় ৮টি প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শন শেষ হলে সেগুলো কাটা শুরু হয়। কিন্তু দুই মাস ধরে অনুমোদন জটিলতায় সেগুলো কাটাই শুরু করা যায়নি। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় জাহাজ ভাঙা শিল্পকে লাল থেকে কমলা শ্রেণীতে ফিরিয়ে নিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গত ১৫ মে এক চিঠির মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেন। কারণ শ্রেণী পরিবর্তনের কারণে জাহাজ ভাঙার কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে শিল্প খাতটিতে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি স্টিল রড বা ইস্পাত শিল্পের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ছে।

সূত্র আরো জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই ডলার কিংবা এলসি জটিলতায় জাহাজ ভাঙা শিল্পে অস্থিরতা চলছে। গত ফেব্রুয়ারির পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় বন্ধ থাকা ইয়ার্ডগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করছে। ছোট-বড় স্ক্র্যাপ জাহাজগুলোয় টনপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৫৮০-৬০০ ডলার। কিন্তু নতুন পরিবেশ বিধিমালার কারণে জাহাজগুলো সৈকতায়নের পরও অনুমোদন না পাওয়ায় উল্টো প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। অথচ এখানে স্ক্র্যাপ জাহাজ বিক্রি করতে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালার কারণে সৈকতায়নের পরও জাহাজ কাটা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে এ শিল্প খাতে। কারণ নতুন জাহাজ কাটা বন্ধ থাকায় চাহিদা তুঙ্গে থাকার পরও ইয়ার্ডগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী রি-রোলিং মিলগুলোয় স্ক্র্যাপ সরবরাহ করতে পারছে না।

এদিকে সার্বিক বিষয়ে বিএসবিআরএ সভাপতি আবু তাহের জানান, ‘সরকার গত ৫ মার্চ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে লাল তালিকায় সর্বশেষ ৭২ নম্বরে রাখা হয়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্পকে। আর লাল তালিকায় নেয়ায় ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষমতা হারায় পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়। এখন ছাড়পত্র নিতে হলে দুই-তিন দফায় ঢাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়। গত দুই মাসে ছাড়পত্র না পাওয়ায় বিভিন্ন ইয়ার্ডে বুধবার পর্যন্ত ৪৫টি জাহাজ আটকে আছে। জাহাজগুলোয় ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এভাবে চলতে থাকলে ছোট ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে না।

অন্যদিকে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (জেলা) মো. ফেরদৌস আনোয়ার জানান, নতুন পরিবেশ বিধিমলা অনুযায়ী ছাড়পত্র বা অনুমোদনের বিষয়গুলো চলছে। বিভিন্ন শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ৩৮টি জাহাজের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৩০টির অনুমোদনপত্র ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি এক সভায় ১১টি স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যেগুলো দ্রুতই আবেদনকারীদের জানিয়ে দেয়া হবে। বাকিগুলোও অনুমোদনের বিষয়ে কাজ চলছে।