September 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 5th, 2023, 9:27 pm

পুরান ঢাকায় পুকুর দখলে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা

পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ডিআইটির শতবর্ষের পুকুর দখল করে মার্কেট ও কাউন্সিল অফিস নির্মাণের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট। এই আদেশের ফলে পুকুরটি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকবে।

স্থিতাবস্থা জারির আদেশ কার্যকর করে বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এক রিটের প্রেক্ষিতে সোমবার (৫ জুন) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

রুলে পুকুরটি রক্ষা করতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ গোষণা করা হবে না, সিএস ও আর এস রেকর্ড অনুযায়ী পুকুরটি সংরক্ষণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং পুকুরের মধ্যে যেসব স্থাপনা করা হয়েছে সেগুলো অপসারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার সচিব, পরিবেশ সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদেরকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

এর আগে গতকাল পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ডিআইটির শতবর্ষের পুকুর দখল করে মার্কেট, কাউন্সিল অফিস নির্মাণ বন্ধ করে পুকুরটি সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

রিটে পুকুর দখলের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবির পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এ রিট দায়ের করেন। রিটে গত ৩ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পুকুর দখল করে মার্কেট ও কাউন্সিলর অফিস’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ১৯৬৩ সালে ১৩ দশমিক ৫৭ একর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর মধ্যে দুই একরের একটি পুকুরও ছিল।

এলাকাবাসী খাওয়ার পানি সংগ্রহ থেকে ধোয়া-মোছাসহ নানাকাজে পুকুরের পানি ব্যবহার করতেন। পুকুর থেকে মাছও ধরতেন তারা। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সেই পুকুরটি ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করে প্রায় ভরাট করে ফেলা হচ্ছে।

চারপাশে ছোট ছোট মার্কেট, দোকান ও রিকশার গ্যারেজও গড়ে তোলা হয়েছে। দখল নিশ্চিত করতে পুকুরের একটি অংশ ভরাট করে নির্মিত দোতলা ভবন স্থানীয় ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহানা আক্তারের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বছরের পর বছর ধরে দখল চললেও উচ্ছেদ না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গত শুক্রবার পুকুর রক্ষার দাবিতে আয়োজিত পুকুর ঘেরাও কর্মসূচি ও মানববন্ধন পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। কর্মসূচি পালন না করে ফিরে গেছেন এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।

পুকুরটি রক্ষায় এলাকাবাসী সিটি করপোরেশন ও রাউজকে বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়েছে। এতে পুকুরটি সংরক্ষণ করে সুপেয় পানি ও অগ্নিকাণ্ডে পানি সরবরাহ এবং অবৈধ অংশ উদ্ধার করে চারদিকে দেয়াল দিয়ে পুকুর রক্ষার দাবি জানানো হয়।

তবে এসব চিঠি কিংবা দাবি-দাওয়ায় টনক নড়েনি সংশ্লিষ্টদের।

এলাকাবাসী জানান, ২০০৪ সালেও রাজউকের পুকুরে গোসল করেছেন তারা। এরপর থেকেই মূলত পুকুরটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে। দখলের শুরুতে পুকুরটিতে প্রচুর আবর্জনা ফেলা হয়।

গৃহস্থালি থেকে শুরু করে সব ধরনের বর্জ্যে পুকুরটি ভরে ওঠে। তারপর স্থানীয় প্রভাবশালীরা পুকুরপাড়ে টং দোকান ও রিকশার গ্যারেজ নির্মাণ করেন।

তখন পুকুরটির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

গেন্ডারিয়া পুকুরের চারপাশ মার্কেট, কংক্রিটের দোকান ও রিকশার গ্যারেজে ঘেরা।

স্থানীয়রা মনে করেন, পুকুরের পাড় দখল করে দোকান তৈরি করা হলেও এখনো পুকুরের বড় অংশই দৃশ্যমান। ধীরে ধীরে ভেতরের অংশ দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা থেকেই চারপাশে মার্কেটের প্রাচীর দেওয়া হয়েছে।

কয়েকজন দোকানি বলেন, এখানে দেড়শ থেকে দুইশ দোকানের ভাড়া তোলেন বর্তমান কাউন্সিলরের বাবা ও সাবেক কাউন্সিলর সাইদুর রহমান সহিদ।

রাজউকের সম্পত্তি বিভাগ জানিয়েছে, পুকুরটি রাজউকেরই। এটি দখলে নেওয়ার জন্য প্রভাবশালীরা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলা এখনো চলছে।

তবে গেজেটভুক্ত সম্পত্তি হওয়ায় পুকুরটি দখলে নিতে পারছেন না দখলদাররা।

এছাড়া অবৈধ দখল উচ্ছেদে রাজউকের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।