October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, June 22nd, 2023, 9:55 pm

জ্বালানি সঙ্কট কাটাতে উচ্চমূল্যের এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে জ্বালানি সঙ্কট কাটাতে উচ্চমূল্যের এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। কারণ সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি সংকটে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কলকারখানাও চলছে ধুঁকে ধুঁকে। বর্তমানে দেশীয় গ্যাস বাদে জ্বালানির বড় অংশই আমদানিনির্ভর। সরবরাহকৃত গ্যাসের এক-তৃতীয়াংশ এবং কয়লা, জ্বালানি তেল ও এলপিজির প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে জ্বালানি আমদানিও বাধাগ্রস্ত হয়। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশীয় উৎসে জ্বালানি চাহিদা মেটানোর মতো কোনো সুখবর নেই। স্থলভাগে নতুন করে বড় গ্যাসের মজুত আবিষ্কারের সম্ভাবনা কম। আর সম্ভাবনা থাকলেও সমুদ্রে এখনো তেমন অনুসন্ধান শুরু হয়নি। ফলে আগামী ৮-১০ বছরের মধ্যে সাগর থেকে গ্যাস পাওয়ার আশা কম।

তাছাড়া ভূ-পরিবেশগত কারণে দেশে নতুন কয়লা খনি খননের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না সরকার। আর পরিবেশগত কারণে কয়লা আমদানিও খুব বেশি বাড়বে না। ফলে আগামী দিনগুলোতে জ্বালানি সংকটে সরকার ব্যয়বহুল তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপরেই ভরসা করতে হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে এলএনজি আমদানি আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেজন্য কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি দ্বিতীয় চুক্তি সই হয়েছে। ওমানের সঙ্গেও দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হয়েছে। নতুন তিনটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সকে দক্ষ কোম্পানি হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। আর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যকর উদ্যোগ নেই। বরং দেশের গ্যাস খাতকে অবহেলা করে এলএনজি আমদানিকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে। এতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে। কারণ অর্থ ও ডলার সংকটে এখনই তেল, কয়লা ও গ্যাস আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।

আমদানি যতো বাড়বে, ঝুঁকিও ততো বাড়বে। বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। দেশীয় ও আমদানি মিলে সরবরাহ গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুট। ২০৩০ সালে চাহিদা বেড়ে হতে পারে ৫৬০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎকেন্দ্রর কয়লার চাহিদা চলতি বছরে শেষে গিয়ে দাঁড়াবে বছরে প্রায় দেড় কোটি টন। ২০৩০ সালের দিকে তা বেড়ে হবে প্রায় ২ কোটি টন। বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা উৎপাদন ক্ষমতা বছরে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টন। বছরে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা সব মিলিয়ে ৯০ লাখ টন। এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশীয় উৎস থেকে উৎপাদন না বাড়লে আমদানির ওপরেই নির্ভর করতে হবে। সমুদ্রের গ্যাস নিয়ে আপাতত আশা নেই। এটা দীর্ঘ সময়ের বিষয়। দেশীয় কয়লার দিকেই নজর দিতে হবে। না হলে এলএনজি আর আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান দিতে পারে।

তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানিতেই এখনকার চাহিদা মেটাতে বছরে ব্যয় হবে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সালের দিকে এই পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ২০-২৫ বিলিয়ন ডলারে। মূলত গ্যাস আমদানি পরিস্থিতির সৃষ্টির জন্য দায়ী হলো বাপেক্সকে অকার্যকর করে রাখা ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে গড়িমসি। আর এলএনজি আমদানিতে খোলাবাজারে ভরসা করায় বিপদ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার জানান, স্থলভাগে নতুন করে কোনো গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গেলে পাইপলাইন স্থাপনসহ তা সরবরাহ করতে অন্তত তিন বছর লাগবে। সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হলে তা সরবরাহে ৮ থেকে ১০ বছর লাগতে পারে। এ জন্যই এলএনজি আমদানি দরকার।