অনলাইন ডেস্ক :
অ্যান্টার্কটিকা- নাম শুনলেই মাথায় আসে বরফযুক্ত, নির্জন ফাঁকা ও শীতল একটি অঞ্চল। কিন্তু একটা সময় দক্ষিণের বিশাল এই ভূখন্ড জঙ্গলে আচ্ছাদিত ছিল। ডাইনোসররা সেখানে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াতো। প্রায় ৬.৬ কোটি বছর আগের ক্রিটেশিয়াস যুগে অ্যান্টার্কটিকায় বরফ ছিল না। ১৪৫ থেকে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে থেকে স্থায়ী ছিল প্রাগৈতিহাসিক এই যুগ। পৃথিবীতে একটি গ্রহাণু আঘাত হানার আগের এই দীর্ঘ সময়কাল ছিল ডাইনোসরদের শেষ যুগ। এই সময়কালে পৃথিবীর দুই মেরুতেই বন ছিল। বিজ্ঞানীরা অতীত জলবায়ু বোঝার জন্য সমুদ্রে বসবাসকারী জীবাশ্ম জীবের শেল ব্যবহার করেন, যা ফোরামিনিফেরা নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়ায় জীবাশ্ম জীবের শেলের রসায়ন বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাসের সময়কালের বয়সের ব্যবধান জেনে, সেই সময়ে সমুদ্রের পানিত তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির ড. ব্রায়ান হুবার অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের আশেপাশের গভীর সমুদ্রঅঞ্চলে ক্রিটেশিয়াস যুগ নিয়ে বিশেষ গবেষণা করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, তারা অ্যান্টার্কটিকার আশপাশে দক্ষিণ মহাসাগরে তাপমাত্রা নিয়ে গবেষণা করে প্রথমে অবাক হন। অতীতে এই অঞ্চল খুব উষ্ণ ছিল বলে মনে হয়েছে। তিনি বলেন, অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের কাছাকাছি ৫৮ ডিগ্রি দক্ষিণে আমরা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও পেয়েছি। এই উচ্চ তাপমাত্রা ক্রিটেশিয়াস যুগের মাঝামাঝি সময়ে ছিল। হুবার আরও ব্যাখ্যা করেছেন, ক্রিটেশিয়াস যুগের মাঝামাঝিতে সমুদ্রতলের দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছিল। কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ায় বেশি বেশি আগ্নেয়গিরির উৎস সৃষ্টি হয়েছিল। কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, অগ্ন্যুৎপাত এবং গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টির ফলে পৃথিবী সেই সময়ে উষ্ণ হয়েছিল। ড. ব্রায়ান হুবার বলেন, অতীতে আমরা যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হতে দেখেছি, তার তুলনায় বর্তমানে পরিবর্তনের হার অভূতপূর্ব।
জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা এখন অত্যধিক বেশি। আমরা মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে বায়ুম-লে শত শত বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করছি। আগ্নেয়গিরিও এত অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন করতে পারে না, এমনকি বিশাল আগ্নেয়গিরি হলেও। ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে হুবার পরামর্শ দেন, অ্যান্টার্কটিকায় বরফের স্রোত দেখতে পাচ্ছি। যে হারে বরফ প্রবাহিত হচ্ছে, তাতে আমরা কয়েক দশকের মধ্যে অ্যান্টার্কটিকাকে অক্ষত দেখতে পাব না। ব্রায়ান হুবার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, হয়তো অ্যান্টার্কটিকায় ডাইনোসররা আর ঘুরে বেড়াচ্ছে না, কিন্তু ভবিষ্যতে এই অঞ্চল বরফহীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটি আমরা অস্বীকার করতে পারি না। মানুষের জন্য এটি কেমন হবে, তা জানার কোন উপায় আমাদের নেই। তথ্যসূত্র: বিবিসি
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু