অনলাইন ডেস্ক :
অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে জেনিন শরণার্থী শিবিরে দুদিন ধরে ইসরায়েল তার সামরিক শক্তিমত্তার জানান দেয়। ২০০২ সালে পশ্চিম তীরে ব্যাপক মাত্রার যে ইসরায়েলি দখলদারী অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, সাম্প্রতিক দৃশ্যপট সেই ঘটনাগুলোকেই মনে করিয়ে দেয়। দৃশ্যগুলো ছিল একই রকম-ইসরায়েলি যুদ্ধাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দালানকোঠা থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়া, যুবকরা টায়ারে আগুন ধরিয়ে বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া, মাথার ওপর দিয়ে শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে ড্রোন, বাজছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন, ফিলিস্তিনিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি সৈন্যরা। জেনিনে স্থল ও আকাশ পথে কয়েকশত সৈন্যের এই আক্রমণে চার শিশুসহ মারা যায় ১২ ফিলিস্তিনি। আধা বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে থাকা এই শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপনকারী ২৩ হাজার ৬০০ মানুষের বসতঘরগুলোতে বুলডোজার নিয়ে চালানো হয় তান্ডব। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় ইসরায়েল কি এই আক্রমণের মাধ্যমে তার সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে?
ফিলিস্তিনের সবচেয়ে পুরোনো জেনিন শরণার্থী শিবিরকে ‘সন্ত্রাসের কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে বর্ণনা করা সৈন্যরা বলে গেছে যে, তারা আবারও আসবে। তবে, ফিলিস্তিনিদের কাছে জেনিন প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেছে। এখানকার অনেক যুবক তাদের সম্প্রদায়কে রক্ষায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে গণহত্যায় মেতে ওঠা ইসরায়েলি সেনাদের বর্বরতা ঠেকাতে। খবর আলজাজিরার। পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবরোধ প্রাথমিকভাবে এই বার্তাই দেয় যে, প্রতিরোধ শক্তিশালী হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্যালেস্টাইন ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির নির্বাহী পরিচালক ইনেস আবদেল রাজেক বলেন, ‘বর্বরতার শক্তি প্রয়োগে এ ধরনের সংক্ষিপ্ত সময়ের সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে এটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যে, কে ক্ষমতায় আছে, আর কার হাতে রয়েছে শক্তি। তবে, ইতিহাস বলে দেয়, এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হচ্ছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ইসরায়েল যা করতে পেরেছে বা যা করার জন্য এই অভিযান চালানো হয়েছিল তা হলো, আশ্রয় শিবিরের অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া এবং জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাগুলোর সামর্থকে নষ্ট করে দেওয়া। এ প্রসঙ্গে ফিলিস্তিনের সমঝোতা দলের সাবেক আইনবিষয়ক উপদেষ্টা ডায়ানা বুট্টু বলেন, ‘সৈন্যরা পুরো শিবিরের অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে, সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে শরণার্থীদের মানসিকভাবে আঘাত করা হয়েছে, আর এসব করা হয়েছে এ কারণেই যে, তারা পরিষ্কার কোনো বিজয় এখান থেকে অর্জন করতে পারেনি।’
২০০২ সালে ১১ দিনের অভিযানে ইসরায়েলি সৈন্যরা ৫২ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে আর শিবিরের বড় একটি অংশ ধ্বংস করে দিয়েছিল। আর ২০ বছর পরে এবার তারা আবারও এসেছিল হামলার পর হামলা চালাতে। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান এখন একটি রীতি হয়ে দেখা দিয়েছে জেনিন ব্রিগেডের সদস্যদের হত্যা করতে বা আটক করে নিয়ে যেতে। তবে, সেখানে অন্যান্য ফিলিস্তিনি সংগঠনের মতো দল-উপদলের ভেদাভেদ না থাকায় ইসরায়েলের পক্ষে তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ নির্মূল করা খুবই কঠিন।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু