অনলাইন ডেস্ক :
স্টাম্পের বাইরের বলটি পয়েন্টের দিকে ঠেলেই রান নিতে ছুটলেন নিগার সুলতানা। কিন্তু ফিল্ডার ছিলেন কাছেই, রানের সুযোগই নেই! ক্রিজে ফিরতে গিয়েও পারলেন না নিগার। রান আউট হয়ে ফেরার পথে বাংলাদেশ অধিনায়ক হতাশায় ছুড়ে মারলেন ব্যাট। এই দলের ব্যাটিংয়ের যা বাস্তবতা, নিগার রান না পেলে বড় স্কোর দাঁড় করানো কঠিন। সেই বাস্তবতা অন্যরা বদলাতে পারলেন না এবারও। প্রায় ১১ বছর পর মেয়েদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলো মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার সেই পুরনো চক্রে আটকা থেকেই উপলক্ষটা রাঙাতে পারল না বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে রোববার ৭ উইকেটের জয়ে এগিয়ে গেল ভারত। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ২০ ওভার খেলে করতে পারে স্রেফ ১১৪ রান। দলের একজন ব্যাটারও ছুঁতে পারেননি ৩০ রান।
প্রতিভাবান স্বর্ণা আক্তারের ২ ছক্কায় অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংসই দলের সর্বোচ্চ। এই রানে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপকে আটকে রাখা তো বহুদূর, বিপাকে ফেলাও কঠিন। বাংলাদেশও তা পারেনি। দুই তারকা ব্যাটার হারমানপ্রিত কৌর ও স্মৃতি মান্ধানার ব্যাটে ভারত জিতে যায় ২২ বল বাকি রেখে। বাংলাদেশের শুরুটা খারাপ ছিল না। অভিজ্ঞ শামিমা সুলতানার সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন প্রিমিয়ার লিগে ঝড় তুলে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া সাথী রানি বর্মন। প্রথম ৪ ওভারে রান আসে ১৬। পঞ্চম ওভারে অভিষিক্ত অফ স্পিনার মিন্নু মানিকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন শামিমা। পরের বলেই আরেকটি বড় শটের চেষ্টায় তিনি হারান উইকেট (১৩ বলে ১৭)। ২৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পরও বাংলাদেশের খেলায় গতি ছিল ভালোই। সোবহানা মোস্তারি উইকেটে যাওয়ার পরপরই চার মারেন ভারতের স্পিনার দীপ্তি শর্মাকে। অভিষিক্ত সাথী শুরুটা মন্থর করলেও পরে টানা তিন বলে মারেন বাউন্ডারি। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই।
অভিজ্ঞ পুজা ভাস্ত্রাকারের লেংথ বলে স্লগ করে বোল্ড হন সাথী (২৬ বলে ২২)। এরপরই ২ রান করে নিগারের ওই রান আউটে বড় চোট লাগে বাংলাদেশের সম্ভাবনায়। সোবহানা দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থেকেও ইনিংস গতি দিতে পারেননি। রানের জন্য ছটফট করতে করতে শেষ পর্যন্ত স্টাম্পড হন তিনি ৩৩ বলে ২৩ করে। পাঁচে নেমে স্বর্ণাও সময় নেন কিছুটা। তবে শেষ দিকে দুটি ছক্কায় হাতের জোর দেখান তিনি। বাংলাদেশের রান কোনোরকমে ১১০ ছাড়াতে পারে তাতে। বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন মারুফা আক্তার। ভারতের আগ্রাসী ওপেনার শেফালি ভার্মাকে শূন্যতেই বিদায় করেন তিনি দুর্দান্ত এক সুইঙ্গিং ডেলিভারিতে। মেডেন উইকেট নিয়ে শুরু করেন মারুফা। তিনে নামা জেমিমা রদ্রিগেস ১১ রান করে স্টাম্পে টেনে আনেন সুলতানা খাতুনের অফ স্পিন। এরপরই স্মৃতি আর হারমানপ্রিতের জুটি। ম্যাচ জিততে হলে এই দুজনকেই দ্রুত ফেরাতে হতো। বাংলাদেশ ব্যর্থ এখানেই। যথারীতি নান্দনিক ও ধ্রুপদি সব শট খেলতে থাকেন স্মৃতি।
পেশির জোর আর স্কিলের পরিধি দেখিয়ে রান বাড়ান হারমানপ্রিত। জুটি পঞ্চাশ ছাড়ানোর পর তবু একটি সুযোগ দিয়েছিলেন হারমানপ্রিত। কিন্তু নিজের বলে সহজ সেই ক্যাচ ছেড়ে দেন সুলতানা। সেই ভুলের খেসারত কড়ায় গ-ায় বুঝিয়ে দেন ভারতীয় অধিনায়ক। সুলতানা পরে অবশ্য আউট করেন ৩৪ বলে ৩৮ রান করা স্মৃতিকে। জুটি থামে ৫৫ বলে ৭০ রানে। তবে হারমানপ্রিত ছিলেন, ভারতকে জিততে তাই বেগ পেতে হয়নি। একের পর এক বড় শটে দলকে তিনি দ্রুতই এগিয়ে নেন জয়ের দিকে। সালমাকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে ম্যাচ শেষ করে দেন হারমানপ্রিত। একাদশ টি-টোয়েন্টি ফিফটিতে অপরাজিত থাকেন তিনি ৩৪ বলে ৫৫ রান করে। ম্যাচের সেরাও তিনিই। সিরিজের পরের ম্যাচ মঙ্গলবার, এই মাঠেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১১৪/৫ (সাথী ২২, শামিমা ১৭, সোবহানা ২৩, নিগার ২, স্বর্ণা ২৮*, রিতু ১১, নাহিদা ০*; পুজা ৪-১-১৬-১, আমানজত ২-০-১৯-০, দীপ্তি ৪-০-১৪-০, মিন্নু ৩-০-২১-১, বারেড্ডি ৪-০-২৪-০, শেফালি ৩-০-১৮-১)।
ভারত: ১৬.২ ওভারে ১১৮/৩ (শেফালি ০, স্মৃতি ৩৮, জেমিমা ১১, হারমানপ্রিত ৫৪*, ইয়াস্তিকা ৯*; মারুফা ৩-১-১৮-১, সালমা ৩.২-০-৩২-০, সুলতানা ৪-০-২৫-২, রাবেয়া ৩-০-২২-০, নাহিদা ৩-০-১৮-০)।
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: হারমানপ্রিত কৌর।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা