নিজস্ব প্রতিবেদক:
সোনা চোরাচালানের করিডোর পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আকাশপথে প্রতিদিনই সোনার চালান আসছে। কিছু কিছু ধরাও পড়ছে। গত দেড় বছরে দেশে সোনা চোরাচালানের এমন অনেক ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আর্থিক ও শুল্ক খাতের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের মতে, এখন উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে সোনা চোরাচালান। এখন পর্যন্ত সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে উড়োজাহাজের ক্রু-বিমানবালা, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছাড়াও আরো অনেকেই ধরা পড়েছেন। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতরা বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা স্বর্ণ নিয়ে আসছে বাংলাদেশে। মূলত ভারতে পাচারের জন্যই বাংলাদেশে এ স্বর্ণ চোরাচালান করে আনা হচ্ছে। এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালান রুটের সবচেয়ে বড় করিডোরগুলোর একটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। কাস্টমস বিভাগ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতিবেশী দেশ ভারত বর্তমানে বৈশ্বিক সোনা আমদানি ও সোনার গহনা রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে প্রতিনিয়তই সম্প্রসারিত হচ্ছে সোনার কালোবাজার। বিয়ে, ধর্মীয় উৎসব ও পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য দেশটিতে সোনার চাহিদা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। আর ক্রমবর্ধমান এ চাহিদার কারণে ভারত এখন বৈশ্বিক স্বর্ণ চোরাচালানের সবচেয়ে বড় গন্তব্যদেশ হয়ে উঠেছে। ভারতে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি করতে হলে বড় অংকের শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে অনেকেই এখন পণ্যটি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। আর দেশটিতে চোরাচালানকৃত সোনার সবচেয়ে বড় উৎস এখন বাংলাদেশ। ভারতে এখন পর্যন্ত আটক করা পাচারকৃত সোনার ৭৩ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশ থেকে। মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকাসহ অন্যান্য উৎস থেকে পাচার হওয়া সোনার সবচেয়ে বড় করিডোর এখন বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ হয়ে ভারতে সোনা পাচার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বিজিবি সীমান্তে পাচারের সময় মোট স্বর্ণ আটক করেছিল ৫৯ কেজি ৪৬৮ গ্রাম। আর চলতি ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই ১২১ কেজি ৪৭৯ গ্রাম স্বর্ণ আটক হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে যে পরিমাণ সোনা আটক হচ্ছে, পাচার হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তারও বেশি। বাংলাদেশ থেকে সোনা পাচারে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সীমান্তই বেশি ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে যশোরের সীমান্ত অঞ্চল অনেক আগে থেকেই সোনা চোরাচালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেখান দিয়ে পাচারের সময় সোনা আটকের পরিমাণও বেড়েছে। সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে প্রধানত হুন্ডি ও হাওলার মাধ্যমে লেনদেন হয়। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে যে পরিমাণ টাকার এলসি করেন, তার ১০ গুণ পাঠান হুন্ডির মাধ্যমে। সে টাকাই প্রধানত সোনা চোরাচালানে ব্যবহার হয়।
বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। ভারতে চোরাচালানকৃত সোনার বড় একটি অংশও সেখান থেকে আসছে। সূত্র আরো জানায়, দেশে চোরাচালানের সোনা সবচেয়ে বেশি আটক হয় যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর সীমান্তে। গত তিন বছরে পাচারের সময় যশোরে প্রায় ১৫০ কেজি স্বর্ণ আটক হয়েছে বলে স্থানীয় বিজিবি ও কাস্টমস সূত্রে জানা যায। এ বিষয়ে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল জানান, সোনা সহ বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান রোধে বিজিবি সদস্যরা কাজ করছেন। বিশেষ করে সোনা চোরাচালানের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে বিজিবির গোয়েন্দা টিম কাজ করছে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম