অনলাইন ডেস্ক :
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে নিষিদ্ধ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার ঘুরে দেখিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। কোরিয়ান যুদ্ধের সমাপ্তির ৭০তম বার্ষিকী ঘিরে উত্তর কোরিয়া সফর করছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু নেতৃত্বাধীন একটি রুশ প্রতিনিধি দল। সম্পর্ক জোরদারের এই সফরে উত্তর কোরিয়ার একটি প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে অংশ নেয় প্রতিনিধি দলটি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ান এবং চীনা সমর্থনে গৃহীত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনের অধীনে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এখন এই তিন দেশ একত্র হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিম জং উন আশা করেন রুশ সেনাবাহিনী এবং জনগণ একটি শক্তিশালী দেশ গড়ার সংগ্রামে বড় সাফল্য অর্জন করবে। কেসিএনএ ইউক্রেন যুদ্ধের উল্লেখ করেনি। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে উত্তর কোরিয়ায় রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রথম সফর এটা। করোনা মহামারির পর রুশ ও চীনা প্রতিনিধিদের উত্তর কোরিয়ার আগমন দেশটির আত্মবিশ্বাসে শক্তি জোগাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, কিমকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি চিঠি দিয়েছেন শোইগু। কিম শোইগুর নেতৃত্বে সামরিক প্রতিনিধিদল পাঠানোর জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই সফর উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত ও ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।’ উত্তর কোরিয়ার মিডিয়া জানিয়েছে, দুই দেশের সার্বভৌমত্ব, উন্নয়ন ও স্বার্থ রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও শান্তি স্থাপনের লড়াইয়ে পারস্পরিক উদ্বেগের বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন কিম উন।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাং সান নাম বলেন, ‘রাশিয়ার ‘ন্যায়বিচারের জন্য যুদ্ধ’ এবং তার সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইকে সমর্থন করে উত্তর কোরিয়া।’কেসিএনএ জানিয়েছে, নতুন অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রদর্শনীর সময় শোইগু’র পাশে ছিলেন কিম। রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে মাল্টি-অ্যাক্সেল ট্রান্সপোর্টার লঞ্চারে উত্তরের কিছু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনের দৃশ্য দেখা গেছে। আরেকটি ছবিতে একটি ড্রোন দেখা গিয়েছে; বিশ্লেষকরা এটিকে নতুন ধরণের ড্রোন বলে ধারণা করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বের উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরিদর্শনের বিষয়টা এটাই প্রমাণ করে যে পিয়ংইয়ং-এর পারমাণবিক কর্মসূচিকে রাশিয়া স্বীকৃতি দিয়েছে।
‘কিছুই গোপন নেই’
বিশ্লেষকরা বলছেন, অবরুদ্ধ উত্তর কোরিয়া এটাকে একটা ভালো সুযোগ দেখতেই পারে। ইউক্রেন হামলার জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় একঘরে হয়ে পড়া রাশিয়াও এবার খোলামেলা ভাবেই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা চালাচ্ছে। কোরিয়া-রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি রিনা বলেন, ‘যদিও রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক সামরিক সহযোগিতা সীমিত রেখেছে, তারপরও সময় বদলেছে।
পরিস্থিতি এমন যে রাশিয়া প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করতে পারে।’ এদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ‘ক্রেমলিন অস্ত্র সংগ্রহের জন্য উত্তর কোরিয়ার প্রতি নজর দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা কোনো গোপন বিষয় না। পুতিন ইউক্রেনে তার যুদ্ধের জন্য সাহায্য ও সমর্থনের জন্য দেশে দেশে ঘুরছেন।’ হোয়াইট হাউস বলছে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে ক্রেমলিনকে সমর্থন করছে উত্তর কোরিয়া। রাশিয়ার সমর্থনে পদাতিক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ অনেক অস্ত্র পাঠিয়েছে পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া অবশ্য তাদের অস্ত্র লেনদেনের কথা অস্বীকার করেছে। সূত্র: রয়টার্স
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু