নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরো খাদ্য গুদাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সেজন্য নতুন করে আরো ১৯৬টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ওসব খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্দেশ্য খাদ্য মজুত সক্ষমতা বাড়ানো, কৃষকের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিতরণযোগ্য চাল সময়মতো সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানো ও টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ‘দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্যগুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ নামের প্রকল্পটির আওতায় ১ হাজার টন ধারণক্ষমতার ৮০টি এবং ৫০০ টন ধারণ ক্ষমতার ১১৬টি খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশের ৫৩টি জেলার ১২৮টি উপজেলা ও তিনটি সিটি করপোরেশনে এসব গুদাম নির্মিত হবে।
সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১৫ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তিন বছরের মাথায় আগামী ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রপ্রস্তাব-ডিপিপি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। খাদ্য মন্ত্রণাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বছরে ৩ কোটি ৩০ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ফসল তোলা থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে অপচয়ের কারণে প্রতি বছর ঘাটতি দাঁড়ায় ১২ লাখ টনের মতো। আমদানির মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ করা হয়। দুর্যোগকালে অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববাজার থেকে চাল আমদানি সব সময় সম্ভব হয় না। কখনও দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিক। ২০০৭ সালের সিডর-পরবর্তী পরিস্থিতিসহ এরকম আরও ঘটনার অভিজ্ঞতা আছে। বিঘ্নিত সরবরাহের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে। এ বাস্তবতায় সরকারের আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ৩৭ লাখ টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সূত্র জানায়, কৃষক যাতে তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পান সে জন্যই কৃষকের কাছের হাটবাজারের মতো গুদাম নির্মাণ দরকার। এখন জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে গুদাম আছে, যেখানে ধান পৌঁছানো সব কৃষকের জন্য সহজ নয়। এসব বিবেচনা করে খাদ্যা গুদাম নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদেনর সুপারিশ এবং অনুমোদন করা হয়।
এদিকে তিন দফা সময় এবং ব্যয় বাড়ানোর পরও এখনো ৮টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। বরং ১০ বছর শেষে বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম। আর পরিকল্পনায় দুর্বলতার কারণে একটি গুদাম নির্মাণের কাজ শেষ পর্যন্ত প্রকল্প থেকে বাদ দিতে হয়েছে। দুই দফা সময় এবং ব্যয় বাড়ানোর পরও সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী ৮টি খাদ্য গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সাইলো নির্মাণের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৭ শতাংশেরও কম। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ছিল গলদ। নকশায়ও ছিল ভুল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ব্যয় প্রাক্কলন বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। কৌশলগত স্থান হিসেবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, খুলনা, বরিশাল ও আশুগঞ্জে আটটি খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। ছয় বছরের মাথায় ২০২০ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা। নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হওয়ার পরও দুই দফা সময় বাড়ানো হয়। আগামী অক্টোবরে সর্বশেষ মেয়াদও শেষ হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে ব্যয়ও বাড়তে থাকে। ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকার ব্যয় প্রাক্কলন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ৬৫ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব জোগান।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন জানান, আগের আট সাইলো নির্মাণের প্রকল্প ব্যর্থ হয়নি। যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব না হলেও ইতোমধ্যে কাজের অগ্রগতি বেড়েছে। আগামী মাসেই দুটি সাইলোর কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। ওই প্রকল্পের সঙ্গে নতুন ১৯৬ খাদ্যগুদাম নির্মাণ প্রকল্পের কোনো সম্পর্ক নেই। খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে শস্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গুদাম নির্মাণ করতেই হবে। দেশে মানুষ বাড়ছে, খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। বর্ধিত মজুতের জন্য ১৯৬ খাদ্যগুদামের অতিরিক্ত আরও নতুন সাইলো এবং খাদ্যগুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি