সুপ্রিম কোর্টে সমাবেশ ও মিছিল না করার বিষয়ে ২০০৫ সালের উচ্চ আদালতের একটি রায় কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
বুধবার (৩০ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম।
একই সঙ্গে দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার প্রেক্ষাপটে বিএনপি সমর্থক সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে যে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে সে বিষয়ে শুনানির জন্য ১৯ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালত অবমাননার আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন- নাহিদ সুলতানা যুথি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
আদেশের পরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ ও লিফলেট বিতরণ করা যাবে না।
সুপ্রিম কোর্টের এ রায় এখন থেকে মানা না হলে তা হবে আদালত অবমাননা। কারণ আপিল বিভাগ আজ ২০০৫ সালে দেওয়া ওই রায় মেনে চলতে বলেছেন। নিষেধ অমান্য করে কেউ মিছিল, সভা-সমাবেশ ও লিফলেট বিতরণ করলে সেই আইনজীবী আইনি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, মূলত ২০০৫ সালে তৎকালীন হাইকোর্টের বিচারপতি আবদুল মতিনের বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব নিষেধাজ্ঞা দেন। আজ থেকে সেই রায় কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। তবে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠা বিএনপির ৭ আইনজীবীর ক্ষেত্রে এই রায় কার্যকর হবে না বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
গত ১৫ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় দুই বিচারপতি তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’। ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাদের অপসারণ চেয়ে সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিএনপি সমর্থক সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন মো. নাজমুল হুদা নামে এক আইনজীবী। সেই আবেদন আপিল বিভাগে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী।
বিএনপির যে সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফাহিমা নাসরিন মুন্নি এবং ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
বুধবার (৩০ আগস্ট) আবেদনটি শুনানির জন্য আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা আবেদনটি অবকাশের পর শুনানি গ্রহণ করব। এরপরই ২০০৫ সালে হাইকোর্টের দেওয়া রায় কঠোরভাবে অনুসরণের আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে বিচারপতি এম.এ মতিন ও বিচারপতি এএফএম আব্দুর রহমানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বা মিছিল করা যাবে না। বহন করা যাবে না কোনো প্ল্যাকার্ড। এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে তা হবে বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের সামিল। এমনকি তা আদালত অবমাননাও বটে।
এ ছাড়া কর্মসূচি দিয়ে কোনো আইনজীবীকে মামলা পরিচালনা করতে বাধা দেওয়া যাবে না বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই রায় গত ১৮ বছরেও মেনে চলেনি আইনজীবীদের সংগঠনগুলো।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২