September 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, September 4th, 2023, 9:59 pm

দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বিপুলসংখ্যক রাসায়নিক কনটেইনারে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম বন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরেই রাসায়নিক বোঝাই বিপুলসংখ্যক কনটেইনার পড়ে রয়েছে। ফলে বন্দরে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা তীব্র হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত নিলাম না হওয়ায় বন্দরে সৃষ্টি হচ্ছে কনটেইনার জট। চট্টগ্রাম বন্দরে লবণ, সার, এসিড, কেমিক্যাল বোঝাই ১২১টি কনটেইনার দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। এছাড়াও বন্দরে নিলামযোগ্য ৬ হাজার ৬৭৭টি কনটেইনার পড়ে আছে, যা বন্দরের ধারণক্ষমতার ১২ শতাংশ দখল করে রেখেছে।

আর নিয়মিত নিলাম না হওয়ার কারণে বন্দরে কনটেইনার জট সৃষ্টি হচ্ছে। ইতঃপূর্বে ২০২০ সালে বন্দরের ২নং গেটের ৩নং শেড ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় ভস্মীভূত হয়। বর্তমানে বন্দরের প্রতিটি শেডেই নিলামযোগ্য ও ধ্বংসযোগ্য পণ্য আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী উদ্যোগ নেই। ফলে বন্দরে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তীব্র হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন শেডে বর্তমানে ২০-৩০ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কনটেইনার বোঝাই রাসায়নিক পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে ১২ টন ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ৬৮০ ব্যাগ ফিনিশিং এজেন্ট, ২২০ ব্যাগ ফিনিশিং কেমিক্যাল, ২ হাজার ব্যাগ কস্টিক সোডা, ৪০০ ব্যাগ সোডা, ৪ টন জুস, ৭ টন লাইট পার্টস, ৬০ ড্রাম কেমিক্যাল, ১০ টন ফিনিশিং এজেন্ট, এক লট পলিথিন গ্লাইকল, এক প্লেট ফটো পলিমার, এক লট ফার্টিলাইজার, ৩ টন সোডিয়াম বেনটোনাইট, এক টন অ্যামোনিয়াম সল্যুশন ইত্যাদি। আর নতুন অকশন শেডে পড়ে আছে-৫ হাজার ৩৪১ টন গর্জন কাঠ, ৬৫০ টন সেডিয়াম সালফেট, ৩৭ ড্রাম স্লাজ ওয়েল, ৬ হাজার লিটার ফর্মালডিহাইড্রেট সল্যুশন, ১৪২ জার কেমিক্যাল, ৫৫ জেরিক্যান ইলেকট্রোলাইট সালফিউরিক এসিড, ৩ গাড়ি ফেনল ও ফসফরিক এসিড।

সূত্র জানায়, বন্দরে পড়ে থাকা কেমিক্যাল বোঝাই ১২১টি কনটেইনারের মধ্যে অ্যাসিড ও কেমিক্যাল বোঝাই ৫৪টি কনটেইনার সিলেটের ছাতকের লাফার্জ হোলসিমের জিও সাইকেল প্ল্যান্টে ধ্বংস করার কথা রয়েছে। সেজন্য সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আর ধ্বংস কার্যক্রমের জন্য কাজ করছে একটি কমিটি। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে রাসায়নিক পণ্য অপসারণে ধীরগতির পেছনে কাস্টমসকে দায়ী করে। চিঠিতে বলা হয়, নিলামের জন্য পণ্য শুল্ক বিভাগকে হস্তান্তর করা হলেও বাস্তবে নিলামযোগ্য পণ্য বন্দর অভ্যস্তরেই থেকে যাচ্ছে। তাতে বন্দরে পণ্যজট সৃষ্টি এবং স্বাভাবিক অপারেশন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ওসব পণ্যের মধ্যে বিপজ্জনক পণ্য ও পণ্যবাহী কনটেইনারও রয়েছে। চিঠিতে প্রতি মাসে নূন্যতম ৪-৫টি ই-অকশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপজ্জনক পণ্যের নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করতে এনবিআরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সূত্র আরো জানায়, বন্দরে অগ্নি ঝুঁকি কমাতে ৩টি সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- নিলাম অযোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অন্য ধ্বংসযোগ্য পণ্য বিনষ্ট করতে গঠিত কমিটির কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করতে পারে।

কাস্টমসের নিলাম শাখায় জনবল বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়। এ লক্ষ্যে নিলাম শাখায় পদায়িত কর্মকর্তাদের ধ্বংস ও নিলাম কাজে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত রাখতে এনবিআর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি বন্দরের পি কেমিক্যাল শেডসহ সব শেড ও ইয়ার্ডে মেয়াদোত্তীর্ণ ধ্বংসযোগ্য রাসায়নিক পণ্য স্বল্প ব্যয়ে ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে নিয়মিতভাবে ধ্বংস করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে সুবিধাজনক স্থানে একটি জিও সাইকেল প্ল্যান্ট স্থাপন করার সুপারিশ করা হয়।

এদিকে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, কয়েক মাস পরপর কাস্টমসে চিঠি দিয়ে কনটেইনারের সর্বশেষ তথ্য দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পড়ে থাকা কনটেইনার বোঝাই পণ্য নিলাম এবং ঝুঁকিপূর্ণ কনটেইনার বা পণ্য অপসারণে কাস্টমস তাদের মতো কাজ করছে।