October 11, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 24th, 2023, 9:47 pm

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপ বা টুকরা লোহার দাম কমেছে। এর প্রভাবে দেশের বাজারেও ক্রমাগত কমছিল স্ক্র্যাপের দাম। আর এই দাম কমে যাওয়া ঠেকাতেই স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকরা। ফলে কম দামে লোহা, স্টিল এবং লৌহজাত পণ্য কেনার সুযোগ থেকে ক্রেতারা বঞ্চিত হচ্ছে।

দেশে বিদেশ থেকে পুরনো জাহাজ কিনে সীতাকুন্ডে অবস্থিত শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ভাঙা হয়। ভাঙা জাহাজের টুকরা বা স্ক্র্যাপগুলো রি-রোলিং মিল বা স্টিল মিলে সরবরাহ করা হয়। সেখানেই তৈরি হয় লোহা, স্টিল ও স্টিলসামগ্রী। গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শিপইয়ার্ড মালিকরা একযোগে স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিপ ইয়ার্ড মালিকদের যুক্তি বেশি দামে লোহা কিনে কম দামে বিক্রি করতে গেলে শিপইয়ার্ডগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। এই কারণে স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। স্ক্র্যাপ সরবরাহ বন্ধ থাকায় কাঁচামাল সংকটে পড়বে স্টিল, লোহা তৈরির সঙ্গে যুক্ত কারখানাগুলো। আর কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হলে সরবরাহ কমবে।

এর প্রভাব পড়বে দেশের অবকাঠামো কাজে। শিপইয়ার্ড থেকে স্ক্র্যাপ কিনে দেশের স্টিল কারখানায় সরবরাহ দেয় স্টিল স্ক্র্যাপ বায়ার্সরা। তাদের অভিযোগ, কোনো ধরনের অবহিত করা ছাড়াই ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শিপইয়ার্ড মালিকরা স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। এটা হঠকারী সিদ্ধান্ত। বিশ্ববাজারে জাহাজ ও লোহার দাম কমলেও এর সুফল পাচ্ছেন না দেশের ক্রেতারা। সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রতি টন স্ক্র্যাপ ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন শিপইয়ার্ড মালিকরা।

দাম কমতে কমতে গত ১২ সেপ্টেম্বরও সেটি বিক্রি হয় টন ৬৫ হাজার টাকায়। আরো যাতে কমতে না পারে সে জন্যই মনোপলি করেই বিক্রি বন্ধ করা হলো। শিপইয়ার্ড থেকে স্ক্র্যাপ কিনে স্টিল মিলগুলো। সরবরাহ বন্ধ থাকায় তারাও বিপাকে পড়েছে। দেশের মোট লোহার চাহিদার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো। বাকি স্ক্র্যাপ বা টুকরা লোহা সরাসরি জাহাজে করে আমদানি করে রি-রোলিং মিলগুলো। সূত্র আরো জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাত তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আয়রন এখন টনপ্রতি ৪৩০ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে।

আগে এটি ছিল টনপ্রতি ৫৬০ ডলার। ফলে টনপ্রতি ১৩০ ডলার কমেছে। আগামী কয়েক মাস দাম আরো কমবে। কারণ বিশ্ববাজারে এখন পুরনো জাহাজের দাম ক্রমাগতই কমছে। এই কমার সুফল ভোক্তাদের দিতে হলে সরাসরি স্ক্র্যাপ আমদানিতে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দিতে হবে। দেশের বাজারে এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৬০ গ্রেডের এমএস রডের দাম টনপ্রতি ৯৪ হাজার টাকা। নন-ব্র্যান্ডেড হলে দাম আরো কম টনপ্রতি ৮৮ থেকে ৯০ হাজার টাকা। ঋণপত্র খোলার সুযোগ দিয়ে আমদানি বাড়ানো গেলে রডের দাম আরো কমে আসবে। বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্ক্র্যাপ জাহাজ এসেছে ৯ লাখ ৭১ হাজার টন। এর বিপরীতে রাজস্ব পেয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন; বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৭৪ কোটি টাকা। এদিকে বিদ্যমান অবস্থা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মাশাদুল আলম মাসুদ জানান, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির জন্য শিপইয়ার্ড থেকে স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ রাখা কোনো যুক্তি হতে পারে না। কারণ আগে কম দামে কিনে যখন বেশি দামে বিক্রি করেছেন, তখন তো এই যুক্তি আসেনি। ব্যবসায় লাভ-লোকসান থাকতেই পারে। কিন্তু লোকসান এড়াতে ইয়ার্ড বন্ধ রাখবেন এটা হতে পারে না।

কিছু প্রভাবশালী ইয়ার্ড মালিকের কারণেই এই সিদ্ধান্ত। অথচ মাঝারি মানের মালিকরা লাভ-লোকসান মাথায় নিয়েই ব্যবসায় টিকে থাকতে চান। বিষয়টি ট্যারিফ কমিশনকে জানিয়েছি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকেও অবহিত করেছি। দ্রুত এর সমাধান না হলে সরকারি অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন কাজেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে শিপ ব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু তাহের জানান, এখন যে জাহাজ ইয়ার্ডে কাটা হচ্ছে সেটি টনপ্রতি ৬৫০ ডলারে কেনা। তখন আমরা স্ক্র্যাপ বিক্রি করেছিলাম টন ৬৬ হাজার টাকায়। আজকে সেটি নেমেছে ৫৫ হাজার টাকায়। আমি কি টনে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লস দেব? ব্যাংকের ঋণের টাকায় এই জাহাজ কেনা। তাহলে টনে ১০ হাজার টাকা ক্ষতি আমি বাড়িঘর বিক্রি করে পরিশোধ করব? করোনায় একবার দেউলিয়া হয়েছি, ডলারের ধাক্কা আমাদের বিপাকে ফেলেছে। এখন আর লোকসানে পড়তে চাই না। এক সপ্তাহ দেখব বাজার কেমন হয়, এর পরই সিদ্ধান্ত নেব।