November 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 7th, 2021, 7:54 pm

সিলেটে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
রেলপথের উপর দিয়ে গেছে গ্রাম্য রাস্তা। রাস্তা দিয়ে চলাচল মানুষ। নিয়মিত যাওয়া আসা করছে যানবাহন। কিন্তু নেই কোনো গেটম্যান। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। কেবল এই একটি নয় সিলেট বিভাগের ২৩৯ রেলক্রসিংয়ের মধ্যে বেশিরভাগেরই এই অবস্থা। কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৬৭ টি ক্রসিংয়েরই অনুমোদন নেই।
সরজমিন এমন কয়েকটি রেলক্রসিং ঘুরে দেখা যায়, অনুমোদনবিহীন এসব রেলক্রসিং দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারপার হচ্ছে মানুষ ও যানবাহন। এতে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
গত রোববার দুপুরে কুলাউড়ার ভাটেরা এলাকার হোসেনপুরের কাছে যে রেলক্রসিং পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাস দুমড়েমুচড়ে যায়, সেটিও অনুমোদনহীন একটি রেলক্রসিং। এ দুর্ঘটনায় দুজন যাত্রী নিহত ও একই পরিবারের ছয়জন আহত হন।
রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোন সংস্থা বা কোন কর্তৃপক্ষ রেল লাইনের উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে হলে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রেল ক্রসিংয়ের উভয় পাশে গেট নির্মাণসহ রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ বছরের জন্য কম পক্ষে তিনজন গেটরক্ষীর মজুরি মজুদ রাখতে হয়। কিন্তু সিলেট বিভাগে এসব রাস্তা তৈরিতে মানা হচ্ছে না এ নিয়ম। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এসব রাস্তাকে অবৈধ বা অনুমোদনবিহীন বললেও বন্ধ করতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। গ্রামীন সড়ক বাড়ার সাথে দিন দিন এমন অরক্ষিত ক্রসিং বেড়েই চলছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুমোদনবিহীন এসব রাস্তা বন্ধ করে দিলেও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে স্থানীয় বাসিন্দারা পুনরায় তৈরি করে। তাই চেষ্টা করেও এসব রাস্তায় চলাচল স্থায়ী ভাবে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
রেলওয়ে সিলেট বিভাগের রেলপথ প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে মোট রেল ক্রসিং ২৩৯টির মধ্যে মাত্র ৭২টি রেল ক্রসিং বৈধ। বাকি ১৬৭টি রেলক্রসিংই হচ্ছে অবৈধ। অনুমোদন ছাড়া ঝুঁকিপূর্নভাবে গড়ে উঠেছে এগুলো।
শহরতলীর কয়েকটি অনুমোদনবিহীন রেলক্রসিংয়ে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ‘সাবধান সামনে রেল পারাপার, সামনে রেলপথ, ধীরে চলুন সামনে রেল ক্রসিং’ ইত্যাদি লেখা সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও এসব রেল ক্রসিংয়ের একটিতেও নেই সিগনালম্যান।
রেলওয়ে সিলেট বিভাগের রেলপথ প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ১৬৭টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে সিলেট জেলায় ৫৩টি, মৌলভীবাজার জেলায় ৪২টি, হবিগঞ্জ জেলায় ৫৯টি, সুনামগঞ্জ জেলায় ১৩টি। যা কোন রকম অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচলের জন্য গড়ে তোলেছেন।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোন জেলায় কতটি অবৈধ রেল ক্রসিং বা অনুমোদনবিহীন রেল গেট আছে তার কোন সঠিক তথ্য দিতে পারবো না। তবে এসব অনুমোদনবিহীন  রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এসব ক্রসিং অনুমোদিত করে সিগনালম্যান দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে’।
তিনি বলেন, ‘এরকম অনেক গেট আছে যা আমরা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে স্থানীয় বাসিন্দারা এগুলো পুনরায় তৈরি করেছে।’
রেলওয়ের প্রকৌশল (পথ) বিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, সিলেট রেলস্টেশন এলাকার দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি ও মোমিনখলা এলাকায় দুটো রেলক্রসিং রয়েছে। সিলেট-ছাতক রেলপথে রয়েছে পাঁচটি। এরপর ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশনের অধীন ছয়টির মধ্যে দুটো অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এরপর কুলাউড়ার ভাটেরা পর্যন্ত সিলেট জেলার অংশের রেলপথে অন্তত শতাধিক রেলক্রসিং রয়েছে, যার কোনো অনুমোদনই নেই।
এভাবে রেলক্রসিং করা অবৈধ। কোনো অনুমতি নেই, যা রেল আইন অনুযায়ী বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।
রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেলপথে ক্রসিং তৈরি করতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পূর্বানুমতি নিতে হয়। ক্রসিংয়ের স্থানে রেলপথের দুই পাশে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ফটক নির্মাণ করতে হবে। এরপর কমপক্ষে তিনজন প্রহরীর মজুরি, সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার খরচও বহন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এরপর সরেজমিন পরিদর্শন করে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণের পর রেলস্টেশন থেকে ওই ক্রসিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়।
কুলাউড়ার ভাটেরা এলাকার হোসেনপুর পর্যন্ত অনুমোদনহীন ক্রসিং বেশি বলে জানায় ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ।
স্টেশনমাস্টার মনির হোসেন বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ ও মাইজগাঁওয়ে ছয়টি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে দুটো অনুমোদিত। বাকি চারটির কোনো অনুমোদন নেই। এরপর ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে কুলাউড়ার ভাটেরা পর্যন্ত পথে পথে রেলক্রসিং। যেখানে গ্রামীণ রাস্তা গিয়ে রেলপথে মিলিত হয়েছে, সেখানেই ক্রসিং হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত রোববার ভাটেরা এলাকায় যে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটে, সেটিও অনুমোদনহীন। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে সিলেট রেলস্টেশনভুক্ত দক্ষিণ সুরমার মোমিনখলা, শিববাড়ি, খোজারখলা, হাজিগঞ্জ ও জলকরকান্দি এলাকায় রেলপথে সাতটি ক্রসিং অরক্ষিত অবস্থায় দেখা গেছে।
সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. খলিলুর রহমান বলেন, গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রেলওয়ের প্রকৌশল (পথ) বিভাগের এক পর্যবেক্ষণে সিলেট থেকে ভাটেরা পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার রেলপথে ২৫টি লেভেল ক্রসিং অনুমোদন প্রস্তাবের তালিকায় ছিল। ওই সময় এসব এলাকায় আরও অন্তত অর্ধশতাধিক লেভেল ক্রসিং দেখা গেছে। দেড় বছর পর এ সংখ্যা শতাধিক হবে।
রেলপথের আশপাশে রাস্তা হওয়ায় যত্রতত্রভাবে রেলক্রসিং হচ্ছে জানিয়ে ব্যবস্থাপক আরও বলেন, এভাবে রেলক্রসিং করা অবৈধ। কোনো অনুমতি নেই, যা রেল আইন অনুযায়ী বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য। এ ব্যাপারে রেলওয়ের প্রকৌশল (পথ) বিভাগ পদক্ষেপ নেবে।