অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বসিলায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করেছে র্যাবের ডগ স্কোয়াড। পাশাপাশি জেএমবির এক শীর্ষ নেতাকে আটক করা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের খাগডহর এলাকায় গ্রেপ্তার চার জঙ্গি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় এই জঙ্গি আস্তানার তথ্য দেন। তাদের কথা অনুযায়ী বাসাটিতে জেএমবির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা থাকতেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে বসিলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। আস্তানা থেকে আটক জঙ্গির নাম এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার। বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় বসিলার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষে র্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা জানান। তিনি বলেন, ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার জেএমবির চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই জঙ্গির আস্তানা সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রেপ্তার জঙ্গিরা জিজ্ঞাসাবাদে বসিলা থেকে আটক জঙ্গির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছিল র্যাবকে। এর ভিত্তিতে র্যাব ঢাকার বাইরে জামালপুর ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মধ্যরাত থেকে বসিলার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায়। অভিযানে বর্তমান সময়ের জেএমবির এক শীর্ষ নেতাকে আটক করতে সক্ষম হয়। আটক জঙ্গির নাম এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিযানস্থল থেকে পিস্তল, গুলি, নগদ পৌনে তিন লাখ টাকা, রাসায়নিকদ্রব্য, দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও বেশকিছু জিহাদি বই জব্দ করা হয়। আস্তানা থেকে আটক জঙ্গিকে র্যাব সদরদপ্তরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সে জেএমবির কোন পর্যায়ের সদস্য তা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানা যাবে। জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজের আগেই সিটি ডেভেলপার লিমিটেড হাউজিং সোসাইটি। মূল সড়ক থেকে দুই মিনিটের হাঁটাপথ দূরত্বে একটা চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন জঙ্গিরা। ওই বাড়িটির মালিক শাহজাহান থাকেন মোহাম্মদপুর এলাকাতেই। আর বাড়িটি দেখাশোনা করতেন সিকিউরিটি গার্ড মো. মহিউদ্দীন। বাড়ি ভাড়া দেওয়া-ওঠানোর যাবতীয় কাজ করতেন তিনিই। এই বাড়ি থেকেই আটক জেএমবির শীর্ষ নেতা অগ্রীম পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া নেন। তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাসায় আসার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন বাড়িটির সিকিউরিটি গার্ড। অভিযান শেষে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আটক উজ্জ্বল মাস্টার চলতি মাসের ২ তারিখে ভবনটির দোতালায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করার কথা বলেন তিনি। বাসা ভাড়ার সময় পাঁচ হাজার টাকা অগ্রীম টাকা দেওয়া হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে পরিবারের লোকজন এলে জাতীয় পরিচয়পত্র দেবে এমন শর্তে বাসাটি ভাড়া নেন তিনি। বাসাটিতে আরও দুজনে আসা-যাওয়া ছিল, তারা গত বুধবার বাসাটি থেকে বের হয়ে যায়। বাড়ির দারোয়ান মহিউদ্দীন বলেন, ওই ব্যক্তি সকাল ৭টার সময় নাশতা করে বাসা থেকে বের হয়ে যেতেন। সারাদিন বাসায় আসতেন না, বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা বাজতো। সে ছাড়াও তার সঙ্গে আরও দুজন ছিল, তারা মাঝে মধ্যে আসতো। ওই দুজনের নাম-পরিচয় জানি না, তবে দেখলে চিনবো। ওই দুজন সর্বশেষ গত বুধবার এসে বের হয়ে যায় আর ফিরে আসেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র কাছে না থাকায়, বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দিতে চেয়েছিল। অগ্রীম পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তিনি বাসা ভাড়া নেন। তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আসার কথা থাকলেও পরে আর নিয়ে আসেননি। যাকে আটক করা হয়েছে সে প্রিন্টিং প্রেসের মালিক দাবি করতেন। আর যে দুজন আসা-যাওয়া করতো তাদের প্রেসের কর্মচারী বলে পরিচয় দিতো। তিনি কখনো প্যান্ট-শার্ট আবার কখনো পায়জামা-পাঞ্জাবি পরতেন। মাঝে-মধ্যে তিনি পানির বোতল, আর খাবার নিয়ে আসতেন। এ ছাড়া অন্যকোনো কিছু আনা-নেওয়া করতে দেখেননি বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড মহিউদ্দীন। বিড়িটির পাশেই সবজিবিক্রেতা জালাল উদ্দীন বলেন, এই বাড়িটির মালিক থাকতেন দুই নম্বর রোডে। তবে বাড়িটিতে ভাড়া দেওয়া ও ভাড়া ওঠানোসহ যাবতীয় কাজ করতেন সিকিউরিটি গার্ড। মাঝে মাঝে মালিক এখানে আসতেন।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ