নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বকাপের আগে শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজের সমাপ্তি সুখের হলো না। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের রুগ্ন চেহারাটা আরও একবার বেরিয়ে পড়ল ‘হোম অব ক্রিকেটে’।ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে নিউজিল্যান্ডের ১৬১ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ থেমে গেল ৮ উইকেটে ১৩৪ রানে। ২৭ রানের জয় তুলে নিল নিউজিল্যান্ড। সিরিজ শেষ হলো ৩-২ ব্যবধানে। মাঝপথে মাহমুদউল্লাহ আর আফিফ হোসেন ম্যাচটা জমিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি। বিশ্বকাপের উইকেট ব্যাটিং সহায়কই হবে। তার আগে এমন ব্যাটিং দৈন্যতার প্রদর্শনী নিশ্চয়ই ভালো কিছু নয়। রান তাড়ায় ব্যাট হাতে নামেন মোহাম্মদ নাঈম আর লিটন দাস। জ্যাকব ডাফিকে প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেন নাঈম। প্রথম ওভারে ৮ রান আসলেও আজাজ প্যাটেলের করা পরের ওভারে আসে মাত্র ১ রান! লিটন দাস আজও স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন না। আজাজ প্যাটেলের করা পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্কট কুগেলেইনের দুর্দান্ত ক্যাচে লিটনের ১২ বলে ১০ রানের ইনিংস থামে। ২৬ রানেই ভাঙে ওপেনিং জুটি। তিনে নামেন সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার। তিনিও শুরুর দিকে ধুঁকছিলেন। ৭ম ওভারের চতুর্থ বলে সৌম্যর (৯ বলে ৪রান) ক্যাচ দুর্দান্তভাবে লুফে নেন রাচিন রবীন্দ্র। বোলার ছিলেন কোল ম্যাকনকি। ৩৮ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন। বাংলাদেশও যেন ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায়। পরের ওভারেই ২১ বলে ২৩ করা মোহাম্মদ নাঈমকে কিপার ল্যাথামের তালুবন্দি করেন বেন সিয়ার্স। ১৪৭ কিলোমিটার গতির বলে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট তুলে নেন এই তরুণ পেসার।
পুরো সিরিজে ব্যর্থ মুশফিক আজও ‘ধারাবাহিকতা’ অক্ষুণœ রাখেন। রাচিন রবীন্দ্রর বলে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ৩ রানে। ৪৬ রানে পতন হয় ৪উইকেটের। এরপরেই মারমুখী ব্যাটিং শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ আর আফিফ। শেষ ৬ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৬৮ রানের। ১৬তম ওভারের শেষ বলে কুগেলেইনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে অ্যালেনে হাতে ধরা পড়েন ২১ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ২৩ রান করা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। এর সাথেই ভাঙে ৪৩ বলে ৬৩ রানের জুটি। বাংলাদেশের জয়ের আশা আবারও ফিকে হয়ে আসে। উইকেটে আসেন নুরুল হাসান সোহান। এক বাউন্ডারিতে ৪ রান করে তিনি আজাজ প্যাটেলের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। বাংলাদেশের পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ডাফির বলে শামীম হোসেন পাটোয়ারী ২ রানে ফিরেন বোল্ড হয়ে। ৫ বলে ২ চারে ৯ রান করা তাসকিন ১৯তম ওভারের শেষ ডেলিভারিতে বল্ড হয়ে যান। শেষ ওভারে দরকার পড়ে ৩৫ রানের। কিন্তু সেই সমীকরণ আর মেলানো সম্ভব ছিল না। ৮ উইকেটে ১৩৪ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ। কিউইরা জয় তুলে নেয় ২৭ রানের। এর আগে মিরপুর শেরে বাংলায় নতুন উইকেটে অনুষ্ঠিত সিরিজের শেষ ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিংয়ে নেমে মারমুখী শুরু করেন ফিন অ্যালেন। তাসকিনের প্রথম ওভারে আসে ২ রান। পরের ওভারে নাসুমের করা প্রথম বলেই শামীম হোসেনের কল্যাণে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান রাচিন রবীন্দ্র। পরের দুই বলে চার-ছক্কায় ১০ রান নেন অ্যালেন। শরীফুলের প্রথম ওভার থেকে ১৯ রান তুলে নেন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিউইদের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ৫৮ রানে। শরীফুলের বলে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি হন ১২ বলে ১৭ করা রাচিন রবীন্দ্র। এক বল পরেই তিনি বিস্ফোরক ফিন অ্যালেনকে বোল্ড করে দেন। ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ৩ ওভার বাউন্ডারিতে ৪১ রানে আউট হন অ্যালেন। কিউইদের রান তোলার গতিও কমে আসে। ৮ম ওভারে মাত্র ৪ রান দেন সৌম্য সরকার। পরের ওভারেই কিউইদের তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটান আফিফ হোসেন ধ্রুব। তার বলে নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসবন্দি হন উইল ইয়ং (৬)। ৮ বলে ১ ছক্কায় ৯ রান করা কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ১১তম ওভারে শামীম হোসেনের তালুবন্দি করেন নাসুম আহমেদ। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে কিউইদের স্কোর তিন অঙ্ক স্পর্শ করে। দলীয় ১১৮ রানে কিউইদের ইনিংস অর্ধেক শেষ হয়। তাসকিনের বলে হেনরি নিকোলাসের (২১) দুর্দান্ত ক্যাচ নেন উইকেটকিপার সোহান। একপ্রান্ত আগলে দারুণ খেলছিলেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ব্যাট হাতে রীতিমতো ঝড় তুলে শেষ ওভারের পঞ্চম বলে তিনি ফিফটি পূরণ করেন। তিনি খেলেছেন ৩৭ বল আর হাঁকিয়েছেন দুটি করে চার-ছক্কা। নির্ধারিত ২০ ওভারে কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৬১ রান। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট হওয়ায় এক ইনিংসেই চার হয়েছে ১৫টি আর ছক্কা হয়েছে ৬টি। সবচেয়ে বেশি ৬টি বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কা হজম করেছেন পেসার শরীফুল ইসলাম। ৪৮ রান ব্যয় করে নিয়েছেন ২ উইকেট। আরেক পেসার তাসকিনও ৩৪ রান খরচ করে ১ উইকেট নিয়েছেন। নাসুম আর আফিফও ১টি করে উইকেট নেন। সবচেয়ে কৃপণ ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। উইকেট না পেলেও ৩ ওভারে দিয়েছেন ১৭ রান।
বাংলাদেশ একাদশ : মাহমুদউল্লাহ, নাঈম শেখ, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুব, নুরুল হাসান সোহান, শামীম হোসেন, নাসুম আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ।
নিউজিল্যান্ড একাদশ : ফিন অ্যালেন, রাচিন রবীন্দ্র, উইল ইয়াং, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, টম ল্যাথাম (অধিনায়ক), হেনরি নিকোলস, কোল ম্যাকনকি, স্কট কুগেলেইন, এজাজ প্যাটেল, জ্যাকব ডাফি, বেন সিয়ার্স।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান