নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ রেলওয়ে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পসহ নতুন রেলপথ ও রেলসেতু নির্মাণ, পুরনো রেলপথ সংস্কার, ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো নির্মাণ, কোচ সংগ্রহসহ ২৪টি অননুমোদিত প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা বিদেশী ঋণ খুঁজছে। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ), চীন সরকার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি), ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি), জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মতো সংস্থাগুলোকে প্রাথমিক উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদেশী ঋণ পেতে সুবিধার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ওই ২৪ প্রকল্প ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন হিসেবে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। আর আগামী ২০২৫ সালের মধ্যেই সিংহভাগ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে কুমিল্লা ও লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার গতিতে প্রস্তাবিত ২২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটটিতে ট্রেন চলবে। তাতে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে যাতায়াতে সময় লাগবে মাত্র ৫৫ মিনিট। ইতিমধ্যে দ্রুতগতির ওই রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। রেলপথটি নির্মাণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। তার মধ্যে রেলওয়ে ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চায়। সেজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছে। আর প্রকল্পটিতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে একাধিক উন্নয়ন সহযোগীও।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি ডেডিকেটেড রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেতুটি নির্মাণে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। আর মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। তার মধ্যে রেলওয়ে ইডিসিএফ থেকে ৭৮৩ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের জন্য চেষ্টা করছে। তাছাড়া রেলওয়ে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর সেকশনে বিদ্যমান রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়াল গেজ রেললাইন নির্মাণের জন্য ২ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করছে। সেজন্য চীনের কাছ থেকে জি-টু-জির মাধ্যমে ২ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। রেলওয়ে ওই সুবিধা কক্সবাজার পর্যন্ত বর্ধিত করতে চায়। সেজন্য চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত বিদ্যমান মিটার গেজ লাইনের সমান্তরালে একটি নতুন ডুয়াল গেজ লাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান মিটার গেজ লাইনটি ডুয়াল গেজে রূপান্তরের জন্য সমীক্ষা পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা খরচ হবে। তার মধ্যে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে রেলওয়ে ঋণ নিতে চায়। একইভাবে টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত বিদ্যমান মিটার গেজ সেকশনকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর শীর্ষক একটি প্রকল্পের পিডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। তাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ঋণের জন্য রেলওয়ে এডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আর লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যমান মিটার গেজ সেকশনকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর করতে ৬ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা খরচ হবে। তার মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে এডিবির কাছ থেকে ৫ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা ঋণের চেষ্টা করছে। একইভাবে ৮ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটার গেজ লাইনের সমান্তরালে একটি নতুন ডুয়াল গেজ নির্মাণের জন্য ৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা ঋণ চাইছে সংস্থাটি।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে সান্তাহার-বগুড়া-কাউনিয়া-লালমনিরহাট-বুড়িমারী বিদ্যমান রেললাইনের সমান্তরালে নতুন ডুয়াল গেজ লাইন নির্মাণ ও বিদ্যমান লাইনটি ডুয়াল গেজে রূপান্তরের জন্য একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। লাইনটি নির্মাণে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আর তাতে বৈদেশিক ঋণ প্রয়োজন হবে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তাছাড়া ভারতীয় এলওসির মাধ্যমে ২০৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রেলওয়ে ঈশ্বরদীতে একটি আইসিডি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। একইভাবে ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণ প্রকল্পে ৭৫০ কোটি টাকা, নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণে ১ হাজার ৩২৯ কোটি, সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত ব্রড গেজ লাইন নির্মাণের জন্য ২ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, আব্দুলপুর-সান্তাহার-পার্বতীপুর সেকশনে বিদ্যমান ডুয়াল গেজ লাইনের সমান্তরালে একটি নতুন ব্রড গেজ লাইন নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা, ফেনী-বিলোনিয়া সেকশনে ডুয়াল গেজে রূপান্তরের জন্য ৯০০ কোটি টাকার বিদেশী ঋণ সন্ধান করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিকল্পনায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম নারায়ণগঞ্জ থেকে লাকসাম-কুমিল¬া পর্যন্ত কর্ডলাইন নির্মাণ। ওই প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ খুঁজছে রেলওয়ে। একইভাবে ২০০টি ব্রড গেজ কোচ কেনার জন্য ১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা, সৈয়দপুরে ক্যারেজ তৈরির কারখানার জন্য ৬২৩ কোটি, কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট ট্রেন কেনার জন্য ৩৪৫ কোটি টাকা, লেভেলক্রসিং গেটগুলো সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত করার জন্য ৩৭ কোটি, রিলিফ ক্রেন সংগ্রহের জন্য ১৬১ কোটি, ঈশ্বরদীতে ওয়ার্কশপ নির্মাণের জন্য ৮১২ কোটি ও পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত ডুয়াল গেজ লাইন নির্মাণের জন্য ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ খুঁজছে রেলওয়ে।
এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে রেলওয়ের বিদেশী ঋণ সন্ধানের প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, রেলকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্পের প্রাথমিক কাজগুলো শেষ পর্যায়ে, আর কোনোটি কেবল শুরু হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। যা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ব্যয় করা বেশ কঠিন। তাই ওসব প্রকল্পের জন্য বিদেশী সাহায্য নেয়া হবে। ওই লক্ষ্যেই রেলওয়ে প্রাথমিক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম