July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 5th, 2023, 9:39 pm

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ বছর ধরে এক্স-রে মেশিন থাকলেও নেই টেকনিশিয়ান

দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে টেকনিশিয়ানের অভাবে অলস পড়ে আছে কুলাউড়া হাসপাতালের নতুন ও পুরাতন এক্স-রে মেশিনটি।

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে টেকনিশিয়ানের অভাবে প্রায় দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এক্স-রে মেশিন মানুষের কোন কাজে আসছে না। হাসপাতালে তিনটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দুইটি পরিত্যক্ত অবস্থায় বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি বরাদ্দ পাওয়া নতুন আরেকটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন পড়ে থেকেও নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া এক্স-রে কক্ষটিও এখন স্টোররুমে পরিণত হয়েছে। টেকনিশিয়ান না থাকার কারণে মেশিনগুলো ব্যবহার করা যায়নি। ফলে বিভিন্ন পরীক্ষা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। এক্স-রে সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিদিন শতাধিক হাড় ভাঙ্গা রোগীসহ অন্যান্য রোগিরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। স্বল্প খরচের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে এক্স-রে করতে হচ্ছে রোগীদের। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একদিকে যেমন রোগীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছে তেমনি সরকার বছরে বড় অংকের টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানায়, কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের সেবা দানের জন্য ১৯৭২ সালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন উদ্বোধন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান। ওই সময় প্রথমে প্রায় ১৪ লাখ টাকা দামের একটি এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ করা হয় হাসপাতালে। পরে ২০০৬ সালে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা দামের আরেকটি নতুন এক্স-রে মেশিন আনা হয়। কিন্তু টেকনিশিয়ান না থাকায় যন্ত্রটি আর ব্যবহৃত হয়নি। পরে ২০১৮ সালে এক্স-রে মেশিনটি সচল করার জন্য ঢাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে মেশিন দেখে সেটি আর কখনো সচল হবে না বলে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। সর্বশেষ তিন মাস আগে ২৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা দামের আরেকটি নতুন ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখনো এটি ব্যবহারের জন্য কোনো টেকনিশিয়ান দেওয়া হয়নি। যদি অচিরেই টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা না হয় তাহলে নতুন এক্স-রে মেশিনটিও নষ্ট হয়ে যাবে।

স্থানীয় অনেকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রোগীরা স্বল্প খরচে সঠিক সেবা নেওয়ার জন্য ওই হাসপাতালে যান। বিভিন্ন গুরুতর সমস্যা বা ভাঙাচোরা রোগীদের এক্স-রে করার প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক্স-রে রিপোর্ট রোগীদের বাইরে থেকে করানোর পরামর্শ দেন। পরে উপায় না পেয়ে শহরের বিভিন্ন বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিকে এক্স-রে করতে হয়। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে ৫০০-৬০০ রোগী, জরুরী বিভাগে ১০০-১৫০ রোগী ও ভর্তি ৫০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ জন রোগীর এক্স-রের প্রয়োজন হয়।

সম্প্রতি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়নের পাবই গ্রামের বাসিন্দা তারেক হাসান ও রুহিন মিয়া বলেন, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা কয়েকজন আহত হই। এরমধ্যে আমাদের দু’জনের পায়ে গুরুতর আঘাত লাগলে এক্স-রের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন থাকার পরও টেকনিশিয়ানের অভাবে আমরা বাইরে থাকে দু’জনে ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে ১০০০ টাকা দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে হাসপাতালে ডাক্তারকে দেখাই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, কুলাউড়ায় একজন সংসদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি থাকারও পরা কেউই হাসপাতালের এই দুরাবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফেরদৌস আক্তার বলেন, দক্ষ অপারেটর নিয়োগ হলে এক্স-রে মেশিন আবারো সচল করা হবে। নতুন এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ পাওয়ার পর টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেবার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিন বার চিঠি পাঠিয়েছি। উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি যাতে করে খুব শীঘ্রই এই উপজেলার মানুষের চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করে টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেয়া হয়।

মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, এক্স-রে মেশিন সচল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে টেকনিশিয়ান নিয়োগ চলমান আছে। তাছাড়া হাসপাতালের এক্স-রে রুমটি ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে।