July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, December 24th, 2021, 8:40 pm

জ্বালানি তেল নিয়ে জ্বালায় পড়েছে বিশ্ব, বিপাকে বাংলাদেশও

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও বাড়ানো হয়। কিন্তু কমে গেলে সবসময় কমানো হয় না। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৮৫ ডলারেরও বেশি বেড়ে গেলে গত মাসে ডিজেল কেরোসিনের মূল্য লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেয় সরকার। এই মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় এবং অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে যে পদ্ধতিতে তেলের মূল্য নির্ধারণ হয় সে ব্যবস্থা সংস্কার করা প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করেন।
জানা যায়, জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন জ্বালানি তেলের দাম আরও বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা করছে। সরকার নির্ধারিত আগের দরে ডিজেল বিক্রি করতে গিয়ে এখন তাদের প্রতি লিটারে ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম কত টাকা হবে – সেটি একচেটিয়াভাবে নির্ধারণ করে সরকার। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৭ বার ডিজেলের দামে সমন্বয় হয়েছে। যার মধ্যে ১৩ বার বেড়েছে আর কমেছে মাত্র ৪ বার। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ভোক্তা সাধারণ এবং অর্থনীতির গবেষক সবাই সর্বশেষ সরকারের নির্বাহী আদেশে তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছে। এই মূল্য বৃদ্ধি অযৌক্তিক বলেও সবাই মতামত দিয়েছে। তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভাড়া বৃদ্ধি আর দ্রবমূল্য বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে প্রতিবাদও হয়েছে অনেক।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আগামী কয়েক বছরে সহনীয় পর্যায়ে আসবে না বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি বরং উল্টো। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের গন্ডি স্পর্শ করতে পারে। নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ প্রবাহ সত্ত্বেও পণ্যটির বাজারদরে এমন ঊর্ধ্বগতির কথা জানিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস।
জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। ওপেকের মতে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন জ্বালানি তেলের বাজারে খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তাই আগামী বছর চাহিদা ও ব্যবহার কমার সম্ভাবনা নেই। জোটটি জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার মহামারীপূর্ব ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে যাওয়ার যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তাতে অটল।
গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়। তখন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদায় ধস নামার আশঙ্কায় দরপতন ঘটে। তবে চলতি মাসে আবারো কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে পণ্যটির দাম। ফলে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে ওপেক। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বকে উচ্চমাত্রার ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে ওমিক্রন। এটি করোনার অন্য যেকোনো ধরনের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
সম্প্রতি মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে ওপেক জানায়, আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা গড়ে দৈনিক ৯ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছতে পারে। গত মাসের পূর্বাভাসের তুলনায় চাহিদার পরিমাণ দৈনিক ১১ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল করে বাড়ানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নিয়মিত ওঠা নামা করা নতুন কোন ঘটনা নয়। আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী, আমদানিকারক দেশগুলো নিজস্ব বাজারে তেলের সরবরাহ মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। খুচরা পর্যায়ে তেলের দাম নির্ধারণে সারা বিশ্বের অভিজ্ঞতায় প্রধানত তিনটি পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়।
তাই তেলের দাম নির্ধারনে প্রচলিত ৩টি পদ্ধতির মধ্যে অধিকাংশ দেশ মার্কেট ডিটারমাইন্ড অর্থাৎ বাজার দরের সাথে নিয়মিত সমন্বয় পদ্ধতি মেনে চলে। এ ছাড়া কিছু দেশে আছে প্রাইস সিলিং বা সর্বোচ্চ মূল্য বেধে দেয়ার পদ্ধতি এবং সবচেয়ে কঠোর পদ্ধতি হলো ফিক্সড প্রাইস বা একদর পদ্ধতি। ফিক্সড প্রাইস হচ্ছে সরকার নির্ধারিত করে থাকে। আর সিলিং হলো মার্কেট প্রাইসের সাথেই থাকে তবে একটা সর্বোচ্চ মূল্যের ওপরে উঠতে পারে না। সেই সময়টাতে হয়তো সরকার ভর্তুকী দেয়।
বাংলাদেশে নিকট প্রতিবেশি ভারতে জ্বালানি তেলের দাম প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় বাজার মূল্যের সাথে সমন্বয় করে। ডায়নামিক ডেইলি প্রাইসিং মেথড নামে এই পদ্ধতি ২০১৭ সাল থেকে চালু হয়েছে দেশটিতে। বাজার দর অনুযায়ী এ পদ্ধতিতে প্রতিদিনই দাম সমন্বয়ের সুযোগ আছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আফগানিস্তানেও বাজার মূল্যের সাথে তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করা হয়।
বাংলাদেশে তেলের দাম নির্ধারণ হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে ফিক্সড প্রাইস মেথডে। এ পদ্ধতি অনুসরণের ফলে বিশ্ববাজারে আচমকা দাম বেড়ে গেলেও ভর্তুকি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি বেড়ে যায়, আবার তেলের দাম অনেক কমে গেলেও সবক্ষেত্রে কমে না ফলে তেলের মূল্য কম থাকার যে সুবিধা – সেটি থেকে ভোক্তারা বঞ্চিত হন। কিন্তু সরকার এবারের উদ্ভুত জ্বালানি সংকটে কোন ধরণের ভর্তুকি দেয়নি।
উল্লেখ্য, আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ের জন্য ২৮ লাখ ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সৌদি আবর ও সিঙ্গাপুর থেকে এ তেল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ দুই প্রস্তাবসহ মোট ১৫টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়।
এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার থেকে ৭২৯ কোটি ৪৮ লাখ ২১ হাজার ৬৮৭ টাকায় ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য তিনটি আলাদা ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এ সার আমদানি করবে।