শীতের শুরুতেই পৃথিবীর বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে কিছুটা উষ্ণতার আশায় হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে প্রচুর প্রজাতির অতিথি পাখি। কিন্তু কিছু অসাধু চক্রের কারণে প্রতিনিয়ত এসব পাখি নিধন হচ্ছে। পাখি নিধন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন মাঝে-মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে বন্ধ হচ্ছে না পাখি শিকার।
জানা গেছে, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপসহ সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়িঘের থেকে সংঘবদ্ধ শিকারি চক্র ফাঁদে ফেলে প্রতিদিন রাতে শিকার করছে অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
পৌরসদর থেকে কয়রা অভিমুখে শিববাটী ব্রিজ পার হয়ে একটু দূরে নির্মাণাধীন কৃষি কলেজের বিপরীতে শামীম হোসেনের ‘ইব্রাহীম গার্ডেন’ নামে বনায়ন প্রকল্প রয়েছে। দিনের শেষে সন্ধ্যার পর থেকে বালিহাঁস, দলকচু, খয়েরী ও দেশীয় বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখি দল বেঁধে আশ্রয় নেয় সেখানে। অন্যদিকে পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীরের প্রবাসী ভাই শামীম হোসেন পাখিদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুললেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল।
সূত্র জানায়, পাইকগাছা উপজেলার বয়রা, কচুবুনিয়া, বাসাখালী, বাইসারাবাদ, তেঁতুলতলা, লতা, উলুবুনিয়া, পুটিমারী, শংকরদানা, হানিমুনকিয়া, বাহিরবুনিয়া, দেলুটি, সোলাদানা, কপিলমুনি, তালতলা, গোয়ালবাথান, শ্রীফলতলা, প্রতাপকাটি, শামুকপোতা, চকবগুড়া, খড়িয়া, অকাইবাসী, ঠাকুনবাড়ী, আমিরপুর, বাইনবাড়ীয়া, কুমখালী ও পৌরসভার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের রয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা বিভিন্ন প্রজাতির এসব অতিথি পাখিরা দলবেঁধে এসব এলাকায় গিয়ে খাদ্য সংগ্রহে নেমে পড়ে। এ সময় সংশ্লিষ্ট ঘের বা জলাশয়ের কর্মচারীদের যোগসাজসে শিকারি চক্র পাখি শিকারে করে।
স্থানীয়রা জানান, এর আগে তারা বিভিন্ন মাছ ও ফড়িং জাতীয় কীট-পতঙ্গে বিষ, ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রাখতো। কোথাও কোথাও ফাঁদ পেতে রাখা হয়। এভাবে শিকারি চক্র প্রতিদিন পাখি শিকার করে। তবে এখন তারা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তাও নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, শিকারিরা গুগল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ডাক ডাউনলোড করছে নিজ নিজ মোবাইলে। এরপর রাতের আকাশে পাখিদের আনাগোনা দেখে মোবাইলে ওইসব পাখির ডাক বাজানো শুরু করছে। পাখিরা ওই টোন শুনে মনে করছে তার অন্যান্য সাথীরা সেখানে জড় হতে থাকে। আর শিকাকিদের এই প্রতারণায় প্রলুব্ধ হয়ে নিচে নেমেই ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে প্রতিদিন শিকার হচ্ছে অসংখ্য অতিথি পাখি।
পাইকগাছা উপজেলার বাতিখালী বনায়ন সমিতির অধ্যাপক জিএমএম আজাহারুল ইসলাম জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে অতিথি পাখি আসা শুরু হয়। মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত এলাকায় পাখিগুলো অবস্থান করে। এরপর আগতদের মধ্যে বেঁচে থাকারা উড়াল দেয় নিজ দেশে। তবে এদের থাকার জন্য তেমন কোনো নিরাপদ আশ্রয়স্থল বা অভয়াশ্রম না থাকায় শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে হাজার হাজার মাইল দূরে আসা অতিথি পাখিদের অধিকাংশরাই প্রবাসেই নিধন হয়।
তিনি জানান, পাখিরা রাতের চেয়ে দিনের বেলায় বেশি নিরাপত্তাহীন থাকে। বিশেষ করে রাতের নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকে সকালে যখন খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে তখন তারা শিকারিদের কবলে পড়তে হয়। পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসনের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জানান বনায়ন সমিতির এ নেতা।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান, পাখি শিকার বন্ধে থানা পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। পাখি শিকারের ব্যাপারে তথ্য পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি