অনলাইন ডেস্ক :
নিয়মিত গতি তুললেন ১৫০ কিলোমিটারের আশেপাশে। একটি ডেলিভারির গতি দেখাল ১৫৫.৮ কিলোমিটার! গতির সঙ্গে বাউন্সের মিশেলে দারুণ বোলিং উপহার দিলেন মায়াঙ্ক ইয়াদাভ। ২১ বছর বয়সী ভারতীয় ফাস্ট বোলার আইপিএলে প্রথমবার খেলতে নেমেই জিতে নিলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। বললেন, এত উজ্জ্বল অভিষেকের কথা কল্পনাও করেননি তিনি। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের হয়ে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শনিবার আইপিএল অভিষেক হয় মায়াঙ্কের। দলের ২১ রানে জয়ের ম্যাচে দুর্দান্ত এক স্পেলে ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে তিনি নেন ৩ উইকেট।
লক্ষ্ণৌতে পাঞ্জাবের রান তাড়ায় দশম ওভারে ষষ্ঠ বোলার হিসেবে প্রথম বল হাতে পান মায়াঙ্ক। পাঞ্জবের রান তখন বিনা উইকেটে ৮৮। ততক্ষণে রীতিমতো রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছেন দলটির দুই ওপেনার শিখার ধাওয়ান ও জনি বেয়ারস্টো। মায়াঙ্ক প্রথম বলটিই করেন ১৪৭ কিলোমিটার গতিতে, অফ স্টাম্পের বাইরের বলটি কাট করার চেষ্টায় গতিতে পরাস্ত হন বেয়ারস্টো। এই ওভারে আরেকটি ডেলিভারিতে গতি ছুঁয়ে ফেলে ১৫০ কিলোমিটার, আরেকটিতে ১৪৮। প্রথম ওভারটা যদিও ভালো কাটেনি তার। দুই ব্যাটসম্যানই একটি করে চার মারেন তাকে। ওভারে আসে ১০ রান। নিজের পরের ওভারেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান তিনি। এই ওভারেই ধাওয়ানকে করা তার প্রথম বলটিতে স্পিড গানে গতি দেখায় ১৫৫.৮ কিলোমিটার। চলতি আইপিএলে দ্রুততম ডেলিভারি এটিই।
ওভারের চতুর্থ বলে বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে ৭০ বলে ১০২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মায়াঙ্ক। লেগ স্টাম্পের ওপরে লেংথ বল পুল করে ডিপ মিড-উইকেটে ধরা পড়েন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। নিজের পরের দুই ওভারে মায়াঙ্ক শিকার ধরেন আরও একটি করে। তার তৃতীয় ওভারে ১৪৯ কিলোমিটার গতির দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন প্রাভসিমরান সিং। পরের বলেই তাকে ফিরিয়ে প্রতিশোধ নেন মায়াঙ্ক। শর্ট বল পুল করতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন ব্যাটসম্যান। কোটার শেষ ওভারে আরেকটি শর্ট বলে জিতেশ শার্মাকে বিদায় করেন মায়াঙ্ক।
এই ব্যাটসম্যানও পুল করার চেষ্টায় বল তুলে দেন আকাশে, আগেরটির মতো এটিও মুঠোয় জমান নাভিন-উল-হাক। ২০০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দ্বাদশ ওভারে বিনা উইকেটে ১০২ থেকে পাঞ্জাব ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে করতে পারে ১৭৮ রান। দারুণ এক স্পেলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে লক্ষ্ণৌর নায়ক মায়াঙ্ক। আইপিএলে গত তিন বছর ধরে লক্ষ্ণৌ দলের সঙ্গে আছেন তিনি। ২০২২ আসরের আগে নিলামে ২০ লাখ রুপিতে তাকে দলে নিয়েছিল লক্ষ্ণৌ। তখন পর্যন্ত স্বীকৃত ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা ছিল বলতে স্রেফ দুটি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলা।
টি-টোয়েন্টির আঙিনায় তখনও পা পড়েনি তার। সেবার আইপিএলে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ তিনি পাননি। পরের আসরেও তাকে ধরে রাখে লক্ষ্ণৌ। কিন্তু প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচের পর হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ায় ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তার খেলা হয়নি সেবারও। তবু এবারের আইপিএলের নিলামের আগে তাকে ধরে রাখে লক্ষ্ণৌ। এবার দলের দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে গেলেন খেলার। সুযোগটা দুই হাতে লুফে নিলেন দিল্লিতে জন্ম নেওয়া এই পেসার। গতিময় বোলিংয়ে নজর কাড়লেন সবার। ম্যাচ শেষে পাঞ্জাব অধিনায়ক ধাওয়ান বললেন, মায়াঙ্কের গতিতে বিস্মিত হয়েছেন তিনি নিজেও।
“মায়াঙ্ক ওর গতির সঙ্গে ভালো বোলিং করেছে। তার মুখোমুখি হওয়াটা দারুণ ছিল, ওর গতিতে বিস্মিত হয়েছি আমি। চেয়েছিলাম তার গতি কাজে লাগিয়ে ব্যাট করতে, কিন্তু বাউন্সার ও ইয়র্কারগুলো ভালোভাবে করেছে সে।” ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে এসে মায়াঙ্ক বললেন, অভিষেকে এত ভালো করবেন, ভাবনাতেও ছিল না তার। “এত ভালো অভিষেক হবে, কখনও ভাবিনি। সবসময় অন্যদের কাছ থেকে শুনে এসেছি, অভিষেকের সময় স্নায়ুচাপ থাকে, কিন্তু প্রথম বলের পর তা কেটে গিয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল খুব বেশি চাপে না থাকা এবং স্টাম্পে বল করা, যতটা সম্ভব গতি ব্যবহার করা।”
“প্রথম উইকেটটি ছিল স্পেশাল। গত মৌসুমে চোটের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা কঠিন ছিল, আমি অল্প বয়সে অভিষেকের লক্ষ্য স্থির করেছিলাম, কিন্তু চোট পাওয়ায় বিপত্তি ঘটে।” এই ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের জায়গায় লক্ষ্ণৌকে নেতৃত্ব দেন নিকোলাস পুরান। তিনিও খুশি মায়াঙ্কের বোলিং নিয়ে। “মায়াঙ্কের রাত ছিল এটি। অনুপ্রেরণামূলক পারফরম্যান্স। দলের প্রত্যেকেই খুশি যে, সে সুযোগ পেয়েছে এবং পারফর্ম করেছে।” অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গতিতারকা ব্রেট লি সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন, “ভারত তাদের দ্রুততম বোলার খুঁজে পেয়েছে। মায়াঙ্ক ইয়াদাভ! খুবই চমৎকার।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা