অনলাইন ডেস্ক :
মিতুল মারমা। দেশের ফুটবলের প্রতিভাবান গোলরক্ষক। রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির ছেলে। বয়স ২০। এবার চীনে অনুষ্ঠিত হ্যাংজু এশিয়ান গেমস ফুটবলে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের তিন ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই খেলেছেন। অসাধারণ ফুটবল খেলেছেন। মিয়ানমারের সঙ্গে ১-০ এবং ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারলেও চীনের বিপক্ষের গোল শূন্য ড্র হয়েছে। তিনটা ম্যাচে অসাধারণ ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। যারা নজরকাড়া পারফরম্যান্স করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম গোলরক্ষক মিতুল মারমা। কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েও এবার গোলপোস্ট নামের তিন কাঠির নিচে আস্থার প্রতীক ছিলেন। আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মিতুল। কিন্তু আফসোস নিয়ে দেশে ফিরেছেন মিতুলরা। মিয়ানমারের বিপক্ষে আত্মঘাতী গোলে হেরেছে বাংলাদেশ।
মিতুল কাছ থেকে দেখেন সেই পরিস্থিতি। ঢাকায় ফিরে গত শনিবার মিতুল জানালেন, ডিফেন্ডার মুরাদ হেড করে ক্লিয়ার করতে লাফিয়ে না উঠলে বলটা পেছনে মিয়ানমারের স্ট্রাইকারের পায়ে পড়ত, ৯০ ভাগ চান্স ছিল গোল হওয়ার। কিন্তু মুরাদের মাথায় লেগে বল জালে ঢুকে যায়।’ মিতুল বললেন, ‘মুরাদ ভালো প্লেয়ার। সব ম্যাচেই সে ভালো খেলেছে। একটা ভুলের কারণে ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরাও অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম।’
ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের ম্যাচ নিয়েও নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন মিতুল। পুরো ম্যাচে ভালো খেলেছি। ভারত সুযোগ পেয়েছে। অস্বীকার করব না। আমাদের রক্ষণ একবারও ভেঙে পড়েনি।’ বিশেষ করে ভারতের ম্যাচে প্রথমার্ধের শেষ দিকে ভারত উপর্যুপরি আক্রমণ করেছিল বাংলাদেশের গোলমুখে। সামাল দেওয়া কঠিন হলেও রক্ষণভাগ প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সঙ্গে গোলরক্ষক মিতুল ঝড়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রমাণ দিয়েছেন। ভারতীয় টিভির ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, যদি বাংলাদেশ গোল হজম করে তবুও গোল শোধ হয়ে যাবে। খেলায় ফিরে আসবে।’ সেই ম্যাচের গোলরক্ষক মিতুলকে নিয়েও প্রশংসা করেছেন ধারাভাষ্যকাররা।
ভারতের বিপক্ষে পেনাল্টি গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। ৮৩ মিনিটে সুনীল ছেত্রি গোল করেন। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে মনে করছেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন। তিনি খেলাটা টিভির পর্দায় দেখেছেন। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘রেফারি পেনাল্টি এড়িয়ে যেতে পারতেন। এটা ফিফটি ফিফটি ছিল।’ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘রহমত মিয়া ভালো খেলেছে। কিন্তু বক্সের ভেতরে পা উঠানোটা ঠিক হয়নি। ওভাবে পা উঠালে পেনাল্টি হবে। আমাদের দেশের ঘরোয়া খেলায় এসব এলাও করে। কিন্তু বিদেশের মাঠে বিদেশি রেফারিদের চোখ ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই।’ সেই ম্যাচের গোলরক্ষক মিতুল কাছ থেকে দেখেছেন। বললেন, ‘রেফারি পেনাল্টি না দিলেও পারতেন।’
এশিয়ান গেমস ফুটবলে সব দলই শক্তিশালী। মিতুল জানিয়েছেন, তাদের পরিকল্পনা ছিল টেকনিক্যাল খেলাটা খেলবেন। চীন ভারত এবং মিয়ানমারকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে। শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশে বিপক্ষে। বাংলাদেশ জিততে পারলে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। কিন্তু ১০০ ধাপের বেশি ওপরে থাকা দল চীনের বিপক্ষে চীনের মাটিতে লড়াই করা কঠিন। গ্যালারিতে সব সমর্থক চীনের। খুব হিসাব করে খেলতে হবে। মিতুল বললেন, ‘সিদ্ধান্ত হলো আমরা প্রেশার দেব। গোল খাব না। সুযোগ পেলে কাজে লাগাতে হবে। অ্যাটাকিং ফুটবল খেলব।’ চীনের বিপক্ষে গোল শূন্য ড্র হয়েছে।
বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এটা বড় খবরই। আত্মঘাতী গোল এবং পেনাল্টির গোলটা একপাশে রেখে হিসাব করলে মিতুল কোনো গোল হজম করেননি এশিয়ান গেমসে। তার পারফরম্যান্স দেশের ফুটবলে আরা একজন নির্ভরযোগ্য গোলরক্ষকের সন্ধান দিয়েছে। বললেন চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলতে গিয়েছিলাম। কারণ জিকো ভাই নেই। আমাকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’ ২০১৯-২০ মৌসুমে উত্তর বারিধারায় খেলতে শুরু করেন মিতুল। এরপর শেখ জামাল ধানমন্ডি এবং ফর্টিস ক্লাব হয়ে আসছে নতুন মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে যোগ দিয়েছেন মিতুল। কৃষকের সন্তান মিতুল। বাবা সংঘ মারমা এবং মা মিলেছ চাকমা। চার ভাইয়ের মধ্যে মিতুল মারমা সবার ছোট।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা