মাগুরার চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠের খেতে নারীরা ছুটে চলেছেন ইঁদুরের গর্তের সন্ধানে। গর্তের সন্ধান মিললেই শুরু হয় খোঁড়া ধান শীষ সংগ্রহের আশায়। সেই শীষ মাড়িয়ে বের করা হবে ধান। সেই ধান সিদ্ধ করে বানানো হবে চাল। যা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দু-বেলা দু-মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা।
অগ্রহায়ণের শুরু থেকে পৌষের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমন খেতে ধান সংগ্রহের কাজ করে বাগদি (বর্গক্ষত্রিয়) সম্প্রদায়ের এক দল নারী। জীবিকার অন্বেষণে প্রতি পদে নানাবিধ ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হয় তাদের। আমনের মৌসুম শুরু হলেই ইঁদুরের গর্তের সন্ধানে নেমে পড়ে দল বেঁধে। প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে প্রতিদিন মাগুরা সদর উপজেলার নন্দীপাড়া থেকে ছুটে আসেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বড়বিলা মাঠে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কঠোর সংগ্রাম।
শুক্রবার উপজেলার বড়বিলা মাঠে সরেজমিনে দেখা যায়, ধান খেতে এক দল নারী খুঁজে বেড়াচ্ছে ইঁদুরের গর্ত। কারো হাতে কোঁদাল, কারো হাতে খন্তা, আবার কারো হাতে বস্তা। আমন খেতে ইঁদুরের জমানো ধানে ভাগ বসাচ্ছে ওরা। এমনকি খেতে পড়ে থাকা ধানের শীষের মালিকানাও তাদের। প্রতিদিন এখন বড়বিলার মাঠে চোখে পড়ে এ দৃশ্য। প্রতিদিনই তারা দল বেঁধে ছুটে চলে ফসলের মাঠে। একটি মুহূর্ত যেন দম ফেলানোর সময় নেই। ইঁদুরের গর্ত কিংবা ঝরে পড়া ধান দেখলেই তাদের চোখে-মুখে ফুঁটে ওঠে সোনালি হাসি।
ইঁদুরের গর্তের ধান সংগ্রহ করতে আসা দূর্গা রানী বিশ্বাস বলেন, ‘বছরের অন্য সময় আমরা হাট-বাজারে কাজ করি। অন্যের খেতে দিনমজুরী দিয়ে, খালে-বিলে মাছ ও কুচে ধরে তা বিক্রি করে সংসার চালাই। আর এই সময় ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করি। প্রতি মৌসুমে ৮ থেকে ১০ মণ ধান পাওয়া যায়।’
চিত্রা রানী বিশ্বাস বলেন, ‘অনেক গর্তেই ধান থাকে না। আবার ভাগ্য ভালো হলে অনেক গর্তেই ধান পাওয়া যায়। তখন বড় আনন্দ লাগে। আবার অনেক গর্তেই ইঁদুরের বদলে সাপ থাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা এ কাজ করি। তাই গর্তে খুব সাবধানে হাত ঢোকাতে হয়। প্রথম প্রথম ইন্দুরের গর্তে হাত দিতি সাহস পেতাম না। যদি পোঁকামাকড় থাকে। তবু ভয়ে ভয়ে একদিন হাত ঢুকাই। খসখস শব্দ হলি ভয় পাই।’
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি