অনলাইন ডেস্ক :
সামরিক ঘাঁটি কিংবা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা- কিছুই নেই এখানে, শুধুই বেসামরিক নিরপরাধ মানুষের বসবাস। তবুও হামলা করা হয়েছে- এভাবেই রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া বাসিন্দা ইভান গার্নুক। ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় ডিনিপ্রো নদীর তীরবর্তী বহুতল ভবনসমৃদ্ধ আবাসিক এলাকায় গত শনিবার বিমান, ক্ষেপণাস্ত্রসহ শতাধিক ভয়াবহ হামলা চালায় রুশ বাহিনী। হামলার সময় তিনি তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরেই ছিলেন। গার্নুক জানান, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনেই ১ হাজার ৭০০ মানুষের বসবাস। এখন আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ায় হামলার শিকার ভবনের বাসিন্দারা মোবাইলের লাইট জ¦ালিয়ে উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছেন। খবর এএফপির। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত শনিবারের ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৩। ৪০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৭৩ জন। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর ভ্যালেন্টিন রেজনিচেঙ্কো। ভয়াবহ এই হামলায় কয়েক ডজন ফ্ল্যাট ধ্বংস হয়েছে। এতে কয়েশ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন বলে জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কিরিলো টাইমোশেঙ্কো। ব্রিটেন প্রথমবার কিয়েভকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ভারী ট্যাঙ্ক দেওয়ার ঘোষণার পরপরই এই হামলা হলো। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বলেছে, এক্স-২২ রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছিল ওই এলাকায়। যেটিতে গুলি করার ক্ষমতার অভাব ছিল তাদের। এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার আরও অস্ত্র দিতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার ‘সন্ত্রাস’ শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই বন্ধ করা সম্ভব। এজন্য মিত্রদের কাছে মজুত থাকা অস্ত্র সরবরাহ করতে হবে কিয়েভকে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইউক্রেনকে চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রথম কোনো পশ্চিমা দেশ হিসেবে কিয়েভকে ভারী ট্যাঙ্ক দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। এসব ট্যাঙ্কই চেয়ে আসছিলেন জেলেনস্কি। ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ট্যাঙ্কগুলো ইউক্রেনে পৌঁছাবে। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে এসব ট্যাঙ্ক ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দেবে ব্রিটেন। এদিকে ব্রিটেনের রুশ দূতাবাস সতর্ক করে বলেছে, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ট্যাঙ্ক দেওয়া যুদ্ধকেই বাড়াবে। বেসামরিক মানুষসহ আরও বেশি সংখ্যক হতাহত হবে। এখন এই ট্যাঙ্ক তাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তু। ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশ মালদোভা বলেছে, শনিবারের হামলার পর তাদের ভূখ-ে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু টুইটে বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ নৃশংস যুদ্ধ আবারও সরাসরি মালদোভাবে প্রভাবিত করেছে। এদিকে, ইউক্রেনে রুশ হামলাকে গতিশীল বলে উল্লেখ করে এর প্রশংসা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন। রোববার তিনি বলেন, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে। সেনারা আরও একবার রাশিয়ার জনগণকে খুশি করবে বলে তিনি আশা করেন। অব্যাহত হামলা ও সোলেডারে বিজয় দাবি করার পর তিনি এসব কথা বললেন। যদিও মস্কোর ওই জয়ের দাবি অস্বীকার করে আসছে কিয়েভ। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে দাবি করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘বিরোধীরা যা বলেছিল তাতো হয়নি, বরং আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম তার চেয়েও অবস্থা ভালো।’ ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী অঞ্চল বেলগোরোডে বিস্ম্ফোরণে ১০ রুশ সেনা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রনিন্ত্রিত বার্তা সংস্থা তাস। এতে বলা হয়, একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ওই বিস্ম্ফোরণ ঘটে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২