অনলাইন ডেস্ক :
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বিপুলসংখ্যক ইভিএম সংরক্ষণ নিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছে। ৩৪ জেলার নির্বাচন কর্মকর্তারাই সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়ায় গুদাম খুঁজে পাচ্ছে না। আর যে ৩০ জেলায় গুদাম পাওয়া গেছে টাকা না থাকায় সেগুলোর ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বকেয়া গুদাম ভাড়ার টাকা চেয়ে চিঠি দেয়া হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো তা ছাড় করেনি। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের উপযোগী ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার মেশিন মেরামতের জন্য বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) নেয়া হয়েছে। আরো মেশিন নেয়া হচ্ছে। ইসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ইভিএম মেশিনের ওয়ারেন্টি ছিল মাত্র এক বছর আর সার্ভিস সাপোর্ট ছিল ৫ বছর। ওয়ারেন্টির সময় চলে যাওয়ায় এখন টাকা দিয়ে ইভিএম মেরামত করতে হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে থাকা ইভিএমের প্রায় অর্ধেকেই নানা ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ছে। পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে অনেক মেশিন। আর সংরক্ষণ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় সেগুলো এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ইভিএম সংরক্ষণের সমস্যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০টি জেলায় গুদাম ভাড়া পাওয়া গেছে। সেগুলোর ভাড়া হিসাবে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা অর্থসংস্থানের জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ইভিএম মেরামত ও সংরক্ষণের টাকার জোগান দিতে ইসি হিমশিম খাচ্ছে। গত দুই অর্থবছরেই ৩৯ হাজার ৯৯৯টি ইভিএম মেরামতে ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো ৪৮ হাজার ৩৭৫টি মেরামতের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জুনে শেষ হতে যাচ্ছে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইভিএম ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। আর ইভিএম গুদাম পাহারা দেয়ার জন্য দুজন আনসার নিয়োগ দিতে হবে। তাছাড়া গুদামের প্রতিটি রুমে দুটি ও প্রতিটি ফ্লোরে একটি করে সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে। ইভিএম চার্জ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক সামগ্রী ইনস্টল করতে হবে। ওসব কাজে জেলাপ্রতি এককালীন ৫০ হাজার টাকা হারে বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তার বাইরে আনসার সদস্যের বেতন, গুদাম ভাড়া ও ইলেকট্রিক বিলসহ অন্যান্য খরচ ইসি সচিবালয়কে মেটাতে হবে। আর ওই টাকা খরচ করার পরও মেশিন ভালো রাখা যাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। বর্তমানে ইসির ১৯টি সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৪ জন ও বাকি জেলাগুলোতে ১১-১২ জন জনবল রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়মিত কাজ করার জন্য ওই সংখ্যক জনবল পর্যাপ্ত নয়। নিয়মিত কাজের বাইরে ওই জনবল দিয়ে ইভিএম চার্জ দেয়া ও দেখভাল করা কঠিন কাজ। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে যেসব যেসব ইভিএমে ত্রুটি রয়েছে তা প্রকল্পের আওতায় মেরামত করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৬০ কোটি টাকা রয়েছে। ওই টাকায় ৪৮ হাজার ৩৭৫টি ইভিএম মেরামত করা যাবে। তবে প্রকল্পটি সরকারের বি ক্যাটাগরিতে থাকায় ওই ৬০ কোটি টাকার ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের অনুমোদন রয়েছে। ওই টাকায় আনুমানিক ৪০ হাজার ইভিএম মেরামতের লক্ষ্য নিয়ে আগানো হচ্ছে। তার আগে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে দুটি পৃথক প্যাকেজের আওতায় ৪০ কোটি টাকায় ৩৯ হাজার ৯৯৯টি ইভিএম মেরামত করা হয়। এদিকে এ প্রসঙ্গে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান জানান, ৪টি অঞ্চল থেকে প্রায় ২৫ হাজার ইভিএম মেরামতের জন্য বিএমটিএফে পাঠানো হয়েছে। আরো মেশিন পাঠানো হবে। প্রকল্পের টাকায় ওসব মেশিন মেরামত করা হচ্ছে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, ইভিএম সংরক্ষণে জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত ওয়্যারহাউজ নেই। যতদিন গুদাম পাওয়া না যাবে ততদিন বিএমটিএফে রাখা হবে। সেজন্য তাদের ভাড়া দেয়া হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ