নিজস্ব প্রতিবেদক:
ই-পাসপোর্ট পেতে অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পাসপোর্ট গ্রাহকদের। সাধারণ ই-পাসপোর্ট নতুন বা নবায়ন যেটাই করা হোক সময় লাগার কথা সর্বোচ্চ ২১ দিন। কিন্তু কারো কারো সেটা লেগে যাচ্ছে তিন থেকে চার মাস। এই দীর্ঘসূত্রতা মূলত শুরু হয় করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে। এখন বেড়েছে দালালের দৌরাত্ম্যও। বিশেষ করে যাদের জরুরিভিত্তিতে পাসপোর্ট দরকার তারা রয়েছেন চরম ভোগান্তি আর অনিশ্চয়তায়। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, এই সমস্যাটা আমাদের আগে ছিল না। করোনা পরবর্তীসময়ে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের যে লোকবল রয়েছে, তাতে একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার আবেদন গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু করোনায় বন্ধ থাকার কারণে খুলে দেওয়ার পর ই-পাসপোর্টে হাজার হাজার আবেদন পড়ছে। আমাদের সক্ষমতার অতিরিক্ত আবেদন পড়ায় ২১ দিনের পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষের পথে তারা কীভাবে দ্রুত পাসপোর্ট পেতে পারে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষের পথে এবং যাদের ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট লাগবে, তারা সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানের কাছে আবেদন করতে পারবেন। যদি বিভাগীয় প্রধান প্রমাণসাপেক্ষে মনে করেন তাকে আগে দিতে হবে, সেক্ষেত্রে তার সময় কমিয়ে আনা যেতে পারে। তবে, তাকে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখাতে হবে। এসময় এই চাপ শিগগির কেটে যাবে বলেও জানান তিনি। অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ আবেদনে কাগজপত্র জমা দেওয়ার তারিখ বেশি দূরে হলেও দালালদের মাধ্যমে তা কমিয়ে আনা যায়। তবে এজন্য গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে দ্রুত পাসপোর্ট পেয়েছেন এমন এক গ্রাহক বলেন, আমি ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করি আগস্টের শুরুর দিকে। আমার পাসপোর্ট দ্রুত দরকার ছিল। কিন্তু আমাকে সময় দেওয়া হয় নভেম্বরের প্রথম দিকে। পরে আমার পরিচিত এক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে একজন দালালের সঙ্গে কথা হয়। তার সঙ্গে বাড়তি পাঁচ হাজার টাকা চুক্তি হয়। তিনি কীভাবে কী করেছেন জানি না। তবে আমি মাসখানেকের মাথায় পাসপোর্ট পেয়ে গেছি। বিষয়টি নজরে আনলে মো. রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, দালালদের বিষয়ে আমরা নানান অভিযোগ পাই। কিছু অসাধুচক্র সব সময় সক্রিয় থাকবে। এটা অস্বীকার করছি না। তাদের মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছে অনেকেই। এর দায়ভার কি পাসপোর্ট অফিস নেবে? দালালদের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, ইমার্জেন্সি কিংবা চিকিৎসার জন্য আবেদন করে দ্রুত পাসপোর্ট নিচ্ছেন। এর বাইরে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। এর পরেও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ প্রমাণ হয়, তবে অধিদপ্তর কার্যকর পদক্ষেপ সব সময়ই নিচ্ছে। যারা আগে পাসপোর্ট নিয়েছেন, কিন্তু পরে ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে নাম মিলছে না তারা কীভাবে নাম পরিবর্তন করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে সব সমস্যারই সমাধান আছে। তবে সমাধান পেতে হলে প্রসেসিংয়ের মধ্য দিয়েই আসতে হবে। যদি কেউ তার নাম পরিবর্তন কিংবা যে কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চান, তবে তাকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস হাজির করে সঠিক পন্থায় আবেদন করতে হবে। করোনা পরবর্তীসময়ে কাজের চাপ বাড়ায় এখন একটু সময় লাগছে ঠিকই, তবে এটা ঠিক হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী বলেন, এই সমস্যাটা আমাদের আগে ছিল না। করোনাপরবর্তী সময়ে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের যে লোকবল রয়েছে, তাতে একদিনে সর্বোচ্চ ৯০০ আবেদন গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু করোনায় বন্ধ থাকার কারণে খুলে দেওয়ার পর ই-পাসপোর্টে হাজার হাজার আবেদন পড়ছে। আমাদের সক্ষমতার অতিরিক্ত আবেদন পড়ায় ২১ দিনের পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ। যার কারণে ফরম পূরণ করার পরও আবেদন জমা দেওয়ার তারিখ পেতেও দেরি হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, মূলত জনবল সংকটের কারণে সেবাগ্রহীতাদের পাসপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। আমরা স্বল্প জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনবল না বাড়ালে এই সংকটের সমাধান হবে না। প্রাথমিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে আগারগাঁওয়ে চার কর্মকর্তা ও ২৫ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলে ওই অফিসের চলমান সমস্যা অনেকটা দূর হবে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ই-পাসপোর্ট জগতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। প্রথমদিকে প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে সহজেই মিলেছে পাসপোর্ট। করোনার কারণে জট তৈরি হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। শিগগির সব ঠিক হয়ে যাওয়ার আশাবাদ কর্মকর্তাদের তরফে করলেও গ্রাহকের শঙ্কা তাতে কাটছে না।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম