নিজস্ব প্রতিবেদক:
উন্নত দেশে উত্তরণে সরকার অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে ব্যয়ও। এতে একাধিকবার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি থেমে থাকেনি। তবে এর উল্টো চিত্রও রয়েছে। অনেক প্রকল্প রয়েছে যেগুলোতে ব্যয় কমেছে এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পগুলো শেষ হতে চলেছে আর বেঁচে যাচ্ছে অর্থও। জানা গেছে, বড় আকারের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে পদ্মা সেতুসহ ৪ প্রকল্পে। দেশের বহুল প্রত্যাশিত এই চার প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ দিকে চলতি বছরই চালু হবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেল। আগামী জুনে উদ্বোধন হবে স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতু। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে আগামী অক্টোবরে। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে চালু হবে ঢাকাবাসীর কাক্সিক্ষত মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই চার প্রকল্প প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ৯ লাখ টাকার ব্যয় সম্বলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়। জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে বরাদ্দ কমছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। এ সেতু নির্মাণ প্রকল্পে এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত এডিপিতে মোট অর্থ চাওয়া হয়েছে ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। ফলে এডিপি থেকে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ১ কোটি টাকা। অন্যদিকে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে (মেট্রোরেল) ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে সংশোধিত এডিপিতে চাওয়া হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে এ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ৮০০ কোটি টাকা। তবে এ প্রকল্পের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এদিকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটি চলতি বছরই উদ্বোধন করা হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এখান থেকে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। ফলে এ প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ৩১৭ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কমেছে ১৬৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর এ প্রকল্পের আওতায় মোট এডিপি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৫৬৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৪০০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ কমছে ১৬৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
তবে বড় বড় চারটি প্রকল্পে অর্থ সাশ্রয় হলেও মেট্রোরেলে ব্যয় বাড়ছে ১১ হাজার কোটি আর সময় বাড়ছে আরও এক বছর। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, অনুমোদিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত নেওয়ায় প্রকল্পের কাজ বেড়ে গেছে। সেজন্য পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আরও প্রায় এক বছর বেশি সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে মেট্রোরেল প্রকল্পটি শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর খরচ হবে আরও ১১ হাজার কোটি টাকা। এজন্য বর্তমান উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করছে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এরইমধ্যে ডিপিপি সংশোধনের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ডিএমটিসিএল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করতে হবে। আমরা এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তারা এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, প্রথমে মেট্রোরেল রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল। তবে সেটি মতিঝিলের পরিবর্তে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম পরিকল্পনা অনুসারে মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। আর মতিঝিল-কমলাপুর অংশটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। এতে মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য দাঁড়াচ্ছে ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি। উড়ালপথে (এলিভেটেড) নির্মাণাধীন এ মেট্রোরেলে আগে ১৬টি স্টেশন ছিল। কমলাপুর যুক্ত হওয়ায় এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭টিতে। এসব বাড়তি কাজ বাস্তবায়নসহ নানান খাতের কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ছে, যার অঙ্ক ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মেয়াদও বাড়বে এক বছর। জানা গেছে, মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশে সোশ্যাল স্টাডি, হাউজহোল্ড সার্ভে, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন পরিকল্পনা, পরিবেশের ওপর প্রভাব এবং বেসিক নকশা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ডিটেইলড ডিজাইন ও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান আছে। এসব কাজ সম্পন্ন করতেই মূলত বাড়ছে প্রকল্পের সময়-ব্যয়।
এদিকে চলতি অর্থবছর এডিপি থেকে আরএডিপিতে (সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আরএডিপি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সভায় প্রস্তাবিত আরএডিপির অনুমোদন দেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশন। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কৃষি, শিল্প ও সমন্বয় উইং) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু-কর্ণফুলী টানেলসহ নানা প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ সাশ্রয় হচ্ছে। এসব বরাদ্দের অর্থ অসম্পন্ন অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়। কারণ এক মন্ত্রণালয়-বিভাগের একাধিক প্রকল্প থাকে। যেমন- সেতু বিভাগে শুধু পদ্মা সেতু নয়, আরও একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সুতরাং পদ্মা সেতুর বরাদ্দ সাশ্রয়ের টাকা অন্য প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমরা সাধারণত মন্ত্রণালয়ভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ দেই। যদি দেখি কোনো মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বরাদ্দের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে তখন একই সঙ্গে কোন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা বেশি সেটি দেখা হয়। সে অনুযায়ী বেশি চাহিদাসম্পন্ন মন্ত্রণালয়ে সাশ্রয় হওয়া অর্থ স্থানান্তর হয়। এ ছাড়া কোনো প্রকল্পে বরাদ্দ কমলে সরকারি ব্যয়ের চাপও কমে আসে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ