November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, July 24th, 2022, 9:30 pm

উপজেলা প্রকৌশলীর অপসারণের দাবি ১৩ ইউপি চেয়ারম্যানের

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :

কুলাউড়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে জরুরী ভিত্তিতে কুলাউড়া থেকে অপসারণের জন্য উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার অনুলিপি মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সংসদ সদস্য, প্রধান প্রকৌশলী (এলজিইডি), অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সিলেট অঞ্চল, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সিলেট, নির্বাহী প্রকৌশলী, মৌলভীবাজার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এদিকে এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত কাজে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ চাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ। তারা উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে পৃথক আরেকটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এদিকে রোববার (২৪ জুলাই ) উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান ও ইউএনও মাহমুদুর রহমান খোন্দকারের উপস্থিতিতে এলজিইডি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধাকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিলে সভায় এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে হট্টগোল বাঁধে। এসময় উপজেলার কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান ও ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বক্তব্যে বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম একজন ঘুষখোর ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তাকে সভায় বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিলে আমরা চেয়ারম্যানবৃন্দরা সাধারণ সভা বয়কট করবো। ইতিপূর্বে আমরা ১৩ ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমরা আগামীতে পরিষদের কোন সভায় অংশগ্রহণ করবো না। এসময় এমপি সুলতান মনসুর ও উপজেলা চেয়ারম্যান সফি আহমদ সলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইউপি চেয়ারম্যানদের আশ^স্ত করে বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সকল চেয়ারম্যানবৃন্দ যে অভিযোগ এনেছেন তা আমরা প্রশাসনিকভাবে এলজিইডি’র উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করবো। তারা তদন্তক্রমে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

১৩ ইউপি চেয়ারম্যানের করা লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে উপজেলা প্রকৌশলী সরাসরি জড়িত থাকার কারণে জনপ্রতিনিধিদের তাঁর কাছে শরনাপন্ন হতে হয়। জামায়তপন্থী আমিনুল ইসলাম মৃধা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুলাউড়ায় যোগদানের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কাজের প্রাক্কলন প্রণয়নে, প্রকল্প বাস্তবায়নে, এডিপির প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ, স্বেচ্ছাচারিতা, নথি স্বাক্ষরের দীর্ঘসূত্রতা, হুয়রানী ও অসদাচরণ করে আসছেন। ঘুষের টাকা না দেওয়া পর্যন্ত কোন বিলপত্রে/কাগজে স্বাক্ষর করেন না। কোন কাজে বার বার ফোন দিলে তিনি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ফোন রিসিভ করেন না। তাঁর এমন অসদাচরণ, দূর্নীতি, ঘুষ ছাড়া নথি ছাড়, টাকার বিনিময়ে স্ক্রীম পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে ভুক্তভোগী হওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করার পর তারা কাজের বিল পান। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নূন্যতম সম্মান তাঁর কাছ থেকে পাননি বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন চেয়ারম্যানগণ।

অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেটি রিপেয়ারিং এর জন্য দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে কাজের প্রাক্কলন ও প্রত্যয়ন দিতে স্কুল প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ৫-১০ হাজার টাকা দাবি করে হয়রানি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি গত কয়েকমাস পূর্বে কুলাউড়ার গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে কোন কারণ ছাড়াই শোকজ করেন। যা নিয়ে সরকারি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য সকল শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। অন্যদিকে কুলাউড়ায় তাঁর পছন্দের কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে তিনি দিন কিংবা রাতে আড্ডায় মেতে উঠেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, বিভিন্ন স্কুলে টেন্ডারে অনিয়ম করে তাঁর পছন্দের ঠিকাদারকে টাকার বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেন। তিনি অফিস চলাকালীন সময়ে অফিসিয়াল পোশাক না পড়ে নিয়ম না মেনে নিজের পছন্দমত টিশার্ট (গেঞ্জি) পরিধান করে অফিস করেন। যার কারণে গত দুই মাস আগে এলজিইডি’র সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ কুলাউড়ায় বিভিন্ন কাজ পরিদর্শনে আসলে তিনি উপজেলা কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধা অফিসিয়াল পোশাক না পড়ে টিশার্ট পড়ে অফিস করছেন। এসময় অতিরিক্তি প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ তাকে ধমক দেন এবং দাঁড় করিয়ে রাখেন। পরে উপজেলা প্রকৌশলী তাঁর কার্যালয়ের অফিস সহায়ককে দিয়ে তাঁর বাসা থেকে অফিসিয়াল পোশাক শার্ট এনে পরিধান করেন। ভবিষ্যতে অফিস চলাকালীন সময়ে অফিসিয়াল পোশাক পড়ার জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। এদিকে কুলাউড়ায় ৪ জন সাব এসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার থাকলেও উপজেলা প্রকৌশলী তাঁর পছন্দমত ওয়ার্ক এসিসট্যান্ট শরীফ হোসেনকে দিয়ে বিভিন্ন কাজের প্রাক্কলন করান। প্রকৌশলী প্রকল্পের কাজ শেষে শুধু ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে স্বাক্ষর গ্রহণ করেন।

কুলাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল কাইয়ুম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে কোন বিষয়ে টাকা ছাড়া প্রত্যয়ন দেন না উপজেলা প্রকৌশলী। তাকে টাকা দিলে রাতেও তিনি স্বাক্ষর করবেন টাকা না দিলে সপ্তাহ দশদিন ঘুরাবেন। আমার ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এ ধরণের খারাপ অফিসার কখনো দেখিনি। তিনি উপজেলার সব প্রাইমারী স্কুলের রিপেয়ারিং কাজে ইস্টিমিট ও প্রত্যয়নপত্র দিতে টাকা দাবি করেন।

উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধা তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান ও শিক্ষকদের অভিযোগগুলো সঠিক নয়। আসলে ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে আমার তেমন কোন কাজ নেই। আমার যা কাজ তা উপজেলা পরিষদের সাথে। উপজেলা পরিষদ আইনে বলা আছে, চেয়ারম্যানগণ কি কি কার্যক্রম করতে পারবে, কি কাজের উপর তারা মন্তব্য করতে পারবে। অফিসিয়াল পোশাকের বিষয়ে তিনি বলেন, সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একদিন টিশার্ট পরিধানের জন্য আমাকে শাসিয়ে ছিলেন এরপর থেকে অফিসে অফিসিয়াল পোশাক পরি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সকল ইউপি চেয়ারম্যানসহ আরো কয়েকটি পৃথক পৃথক অভিযোগ পেয়েছি। রোববার মাসিক সাধারণ সভায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি সভার রেজুলেশনে নথিভুক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডি’র উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নির্মল কুমার বিশ^াস মুঠোফোনে বলেন, একজন উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ শুনে খুবই আশ্চর্য্য হলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।