নিজস্ব প্রতিবেদক :
কোভিড-১৯ মহামারি বিবেচনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের এপিএ মূল্যায়নে কিছু নতুন নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সম্প্রতি সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির জুন মাসে অনুষ্ঠিত সভায় এপিএ মূল্যায়নে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত চিঠি সব সিনিয়র সচিব/সচিবদের পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সরকারি অফিসগুলোর ২০২০-২১ অর্থবছরের এপিএ বাস্তবায়নের মেয়াদ ৩০ জুন উত্তীর্ণ হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের এপিএ’র অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার মূল্যায়নের বিষয়ে (প্রমাণকসহ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ নির্দেশনা ইতোপূর্বে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো-
ক. কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সূচকের কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয় নাই (অর্থাৎ অগ্রগতি শূন্য); সেসব সূচক এপিএ মূল্যায়নে বিবেচনা করা হবে না। এসব সূচকের মোট বরাদ্দকৃত নম্বর বাদ দিয়ে অবশিষ্ট নম্বরের আনুপাতিক হারে মন্ত্রণালয়/বিভাগের এপিএ’তে প্রাপ্ত নম্বর গণনা করা হবে। উদাহরণ: ধরা যাক ‘ক’ মন্ত্রণালয়ের তিনটি সূচকে বর্ণিত কার্যক্রম কোভিড মহামারি বিবেচনায় সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অর্জন করা সম্ভব হয় নাই অর্থাৎ অর্জন শূন্য। ওই তিনটি সূচকের বরাদ্দকৃত সর্বমোট নম্বর পাঁচ। এ ক্ষেত্রে ওই মন্ত্রণালয়ের এপিএ মূল্যায়ন করা হবে ওই তিনটি সূচকে সর্বমোট নম্বর বাদ দিয়ে। অর্থাৎ ১০০-৫=৯৫ নম্বরে। এরপর ওই ৯৫ নম্বরে মন্ত্রণালয়টি যদি ৯০ পেয়ে থাকে, তাহলে দেখতে হবে ১০০ তে কত পায়, অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ১০০ তে পায় ৯৪.৯৪। এ নম্বরটি হবে ওই মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত চূড়ান্ত নম্বর।
খ. কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কারণে কোনো সূচকে ধার্যকৃত সর্বনিম্ন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম অর্জিত হলে উপযুক্ত প্রমাণকের ভিত্তিতে ওই সূচকের সর্বনিম্ন লক্ষ্যমাত্রা ও নম্বরকে ভিত্তি ধরে আনুপাতিক হারে নম্বর প্রদান করা হবে। উদাহরণ: ধরা যাক কোনো সূচকের বরাদ্দকৃত নম্বর দুই। ওই সূচকের অসাধারণ লক্ষ্যমাত্রা (১০০%) ছিল ৫০টি প্রশিক্ষণ। অর্থাৎ ৫০টি প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে পূর্ণ দুই নম্বর পাওয়া যাবে। ওই সূচকে চলতিমানের নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা (৬০%) ছিল ২০টি প্রশিক্ষণ। অর্থাৎ ২০টি প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে দুই এর ৬০% নম্বর বা এক, দুই নম্বর পাওয়া যাবে। কিন্তু কোভিডের কারণে ওই সূচকে মন্ত্রণালয়ের অর্জন ১০টি প্রশিক্ষণ। এ ক্ষেত্রে চলতিমানের নিম্নের লক্ষ্যমাত্রা (২০টি প্রশিক্ষণ) ও বরাদ্দকৃত নম্বর (এক, দুই) হবে মূল্যায়নের ভিত্তি অর্থাৎ, ২০টি প্রশিক্ষণ দিলে প্রাপ্ত নম্বর এক, দুই। সুতরাং ১০টি প্রশিক্ষণ দিলে প্রাপ্ত নম্বর (১,২ী১০)/২০=০,৬।
গ. তবে উপরিল্লিখিত নির্দেশনা ‘খ’ প্রতিপালনে মন্ত্রণালয়/বিভাগসহ সরকারি অফিসগুলো এপিএ’তে উল্লিখিত কার্যক্রমের মধ্য থেকে (আবশ্যিক কৌশলগত উদ্দেশে বর্ণিত কার্যক্রমসহ) সর্বোচ্চ ১০ নম্বরের কার্যক্রমকে যৌক্তিকতাসহ কোভিড-১৯ এর কারণে ব্যাহত হয়েছে মর্মে সুনির্দিষ্ট করতে পারবে। অর্থাৎ ১০০ নম্বরের এপিএ’তে সর্বোচ্চ ১০ নম্বরের ক্ষেত্রে ‘খ’ নির্দেশনা প্রয়োগের সুযোগ থাকবে। অবশিষ্ট ১০ নম্বরের মূল্যায়ন সাধারণ নির্দেশনার আলোকে সম্পন্ন করতে হবে।
ঘ. যেহেতু ২০২০-২১ অর্থবছরের এপিএ প্রণয়নের সময় কোভিড-১৯ মহামারি বিরাজমান ছিল এবং মহামারি ২০২০-২১ অর্থবছর সময়কালেই শেষ হওয়ার কোনো ইঙ্গিত ছিল না, সেহেতু ধরে নেওয়া যায়, মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই নিজ নিজ এপিএ’তে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কাজেই ঢালাওভাবে মহামারির কারণে এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার দাবি বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নাই। তবে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের দু’টি একটি কাজ যদি শুধুমাত্র কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হয় কিংবা ৬০% লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম অর্জিত হয় এবং এসব বিষয়ে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকে শুধুমাত্র সেসব ক্ষেত্রে উপরিল্লিখিত ‘ক’ ও ‘খ’ নির্দেশনা অনুসরণে এপিএ মূল্যায়ন করা হবে।
এসব লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনায় কিছু শর্ত অনুসরণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনা কিংবা সানুগ্রহ সিদ্ধান্তের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে; মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটি অথবা সচিব কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেলে এবং কোভিড-১৯ মহামারি বিবেচনায় অর্থ বিভাগ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা/সিদ্ধান্তের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে। মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ ২০২০-২১ অর্থবছরের স্বমূল্যায়িত প্রতিবেদন উপযুক্ত প্রমাণকসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দাখিলের সময়সীমা আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো। ওই প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে উপরিল্লিখিত নির্দেশনার আওতায় যেসব সূচকের নম্বর দাবি করা হয়েছে, তা পৃথকভাবে উল্লেখ করতে হবে। চিঠিতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনাসমূহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনুসরণ করে ২০২০-২১ অর্থবছরের এপিএ’র চূড়ান্ত মূল্যায়ন সম্পন্ন করার অনুরোধ করা হয়েছে। নির্দেশনাসমূহ নিজ নিজ আওতাধীন দপ্তর/সংস্থা ও মাঠপর্যায়ের অফিসসমূহকে অবহিত করার জন্যও অনুরোধ করা হয়।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম