নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে নানা বিধি-নিষিধে দেশের অর্থনীতির বিপর্যস্ত অবস্থা। ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত বন্ধ। সংশয় রয়েছে কাক্সিক্ষত মাত্রায় রাজস্ব আদায় নিয়েও। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি বাস্তবায়ন করে সরকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে চাচ্ছে সরকার। গত অর্থবছরে কৃচ্ছ্রসাধন করে সরকার প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কৃচ্ছ্রসাধন দিয়েই নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম দিনেই সরকার সরকারি ভ্রমণ ব্যয়ের ৫০ শতাংশ বরাদ্দ স্থগিত করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ওইদিন একটি পরিপত্র জারি করে ওই স্থগিতাদেশ দেয়। বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের ভ্রমণ ব্যয় বাবদ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ওই খাতে ৫০ শতাংশ ব্যয় স্থগিতের কারণে সাশ্রয় হবে এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের খরচ মেটাতে সরকার ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ভ্রমণ ব্যয় ৫০ শতাংশ স্থগিত করা হয়। তাতে অর্থবছর শেষে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয়ের কথা থাকলেও বিভিন্ন বিদেশি সেমিনার, মিটিং স্থগিত হওয়ায় তা প্রায় দুই হাজার কোটিতে ঠেকেছে। তার আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরেও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বেঁচে গিয়েছিল। ওই অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, সদ্য শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের প্রথম দিনে পৃথক আরেকটি পরিপত্র দিয়ে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গাড়ি কেনা বাবদ ৫০ শতাংশ ব্যয় স্থগিত করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের গাড়ি কেনা বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তাতে ওই খাত থেকে সাশ্রয় হবে ৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। গত অর্থবছর কৃচ্ছ্রসাধনের আওতায় ৫০ শতাংশ গাড়ি কেনা স্থগিত করেছিল সরকার। গত অর্থবছরে গাড়ি কেনা বাবদ বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। তাতে সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। আর সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে গত অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ ব্যয়ের ওপর অর্থ বিভাগ স্থগিতাদেশ দেয়। সংশোধিত বাজেটে ওই স্থগিতাদেশ কার্যকর করা হয়। গত অর্থবছর সংশোধিত এডিপির আকার ছিল এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। ফলে ওই খাত থেকে ২৯ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, করোনার প্রভাব না কমলে আবারো গত অর্থবছরের মতো এডিপি বরাদ্দের ১৫ শতাংশ ব্যয়ে স্থগিতাদেশ আসতে পারে। ওই ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মধ্যম পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় অব্যাহত রাখা হতে পারে। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় স্থগিত করা হতে পারে। নতুন অর্থবছরে এডিপির আকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ১৫ শতাংশ স্থগিত করা হলে ওই খাত থেকে সরকারের সাশ্রয় হবে ৩৩ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। তাছাড়া সরকারের প্রশিক্ষণ ব্যয়ের লাগামও টেনে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। তাদের মতে, ওই টাকা গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় করা হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি