April 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 2nd, 2022, 9:44 pm

খরচের লাগাম টানা সত্ত্বেও বেড়ে চলেছে এডিপির ব্যয়

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

খরচের লাগাম টানা সত্ত্বেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় বাড়ছে। ফলে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় গৃহীত কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে। এডিপির বাস্তবায়ন চলতি অর্থবছরের ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বেড়েছে। ওই সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ২৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা খরচ করেছে। বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরের একই সময় ১৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল আর এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরের শুরুতেই প্রকল্পের ব্যয়ে লাগাম টেনেছিল। সেজন্য প্রকল্প এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে (শ্রেণি) ভাগ করে দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের গ্রেড উন্নয়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তোড়জোড় শুরু করেছে। এডিপি বাস্তবায়নে বেশি ব্যয়ে সরকারের কৃচ্ছ সাধনের উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জুলাইয়ে প্রায় ৬৩৬ উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দে কাটছাঁট করা হয়। আর চলমান প্রকল্পগুলোকে এ, বি ও সি শ্রেণিতে ভাগ করে দেয়া হয়। তার মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় ‘এ’ শ্রেণিতে ৬৪৬টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলোর বরাদ্দে হাত দেয়া হয়নি। ‘বি’ শ্রেণিতে রাখা ৬৩৬টি প্রকল্পের সরকারি অংশের ২৫ শতাংশ অর্থ স্থগিত করা হয়। আর বাকি ৭৫ শতাংশ ব্যয়েও নানা নির্দেশনা ছিল। তাছাড়া স্থগিত করে দেয়া হয় ‘সি’ শ্রেণিতে থাকা প্রায় ৯০টি প্রকল্পের অর্থ। ফলে আশা করা হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। কিন্তু এডিপি’র ব্যয় বেড়ে চলায় কমে যাচ্ছে সাশ্রয়ের আশা।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে বিগত ৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছিল ১৭ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ হয় ১৭ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়ন হার ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৪ মাসে খরচ হয়েছিল ১৪ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা এবং ওই সময় এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের ৩ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ৬১ দশমিক ২৩ শতাংশ, আইএমইডি ২৮ শতাংশ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২৩ শতাংশ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২০ শতাংশ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ২১ শতাংশ, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণায় ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। আর গত ৩ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ, দুর্নীতি দমন কমিশন শূন্য ১৭ শতাংশ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১ টাকাও খরচ নেই। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেরি প্রকল্পগুলোর গ্রেড বা শ্রেণি উন্নয়নে তোড়জোড় শুরু করেছে। সেই সঙ্গে বরাদ্দ পুনর্বিন্যাসও চলছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে ২৭টি প্রকল্পের নতুনভাবে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে- অর্থ বিভাগের নির্ধারিত সিলিং অতিক্রম না করার শর্তে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওসব প্রকল্পের বরাদ্দ পুনর্বিন্যাসের অনুরোধ করা হলো। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ‘সি’ শ্রেণির ৮টি প্রকল্প চলমান রাখতে প্রস্তাব দেয়া হয়। ওসব প্রকল্প সচল রাখতে অতিরিক্ত ২৮১ কোটি ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দও চাওয়া হয়। ওই পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তাছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের কাছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে নতুন অনুমোদিত ৮টি প্রকল্পের জন্য ৫১ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে আইএমইডি’র সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান জানান, এডিপির ব্যয় বৃদ্ধি ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প ‘এ’ ক্যাটাগরির সেগুলোতে সবাই বেশি নজর দিচ্ছে। সেই সঙ্গে যেসব প্রকল্প ৭৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছে সেটির ওপরই সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন হিসাব করা হয়েছে। যেসব প্রকল্প স্থগিত সেগুলোও হিসাবে নিয়ে আসা হয়নি। তাই সরকারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু হচ্ছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ জানান,। অর্থবছরের শুরুতেই এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় বাড়ছে এটা ভালো লক্ষণ। কৃচ্ছ সাধন করা হলেও যেসব প্রকল্পে টাকা দেয়া হচ্ছে তারা ওই টাকার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। প্রতিযাগিতামূলক পরিস্থিতিতে সবাই নড়েচড়ে বসেছে। তাছাড়া একেক প্রকল্পের একেক ধরন। তাই যেগুলোতে বরাদ্দ কমানো বা স্থগিত করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে এখন আবার কিছু প্রকল্প স্বাভাবিক করা হচ্ছে। কেননা তখন তাড়াহুড়ো করে ক্যাটাগরি ভাগ করা হয়েছিল। এখন গুরুত্ব বুঝে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো গ্রেড উন্নত করে নিচ্ছে। এটা দোষের কিছু নয়।