জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :
জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আসাদ মিয়া (২০) ও আশিকুর রহমান (১৫) নামের দুই সহোদর অ্যাসিড দগ্ধ ঘটনার সাথে জড়িতদের গত দুই দিনেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। গত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধ আসাদ মিয়া চট্রগাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষ ও আশিকুর রহমান সুন্দরগঞ্জ আবদুল মজিদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। তারা উত্তর সাহাবাজ গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে। দগ্ধদের মধ্যে আসাদকে ঢাকায় স্থানান্তর এবং আশিকুরকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
তবে এ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় চলে লুকোচুরি খেলা। এ্যাসিড দগ্ধদের নিয়ে আত্মীয়-স্বজন ব্যস্ত থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাড়ি ও সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তাদের কাছে এ ধরণের কোন তথ্য নাই এবং তারা কোন অভিযোগ পান নাই বলে সংবাদকর্মীদের জানান। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফলে তথ্য সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হয়।
পুলিশ ও থানায় দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন থেকে উত্তর সাহাবাজ গ্রামের ফিরোজ মিয়ার সঙ্গে তার আপন ভাই সুমন মিয়ার ১৫ শতাংশ পৈতৃক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জেরে বৃহস্পতিবার ভোররাতে আসাদ ও আশিকুরকে লক্ষ্য করে জানালা দিয়ে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যান সুমন মিয়া। এতে আসাদ ও আশিকুর দগ্ধ হন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে আসাদ মিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠায়। সেখানে তার অবস্থা আশংকাজনক বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. আবুল হাসান বলেন, অ্যাসিডে দগ্ধ দুই ভাই হাসপাতালে ভর্তি হন। এরমধ্যে আসাদ মিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আসাদের মুখ মন্ডলের প্রায় অর্ধেক অংশ ঝলসে গেছে। অপরজনের মুখমন্ডলের সামান্য ঝলসে গেছে।
শুক্রবার দগ্ধ আসাদ ও আশিকুরের মা আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি রেকর্ড করা নিয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ কালক্ষেপন করেন বলে অভিযোগ স্বজনদের। মামলায় সুমন মিয়াসহ পাঁচ-ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
আসাদ ও আশিকুরের ফিরোজ মিয়া বলেন, সামান্য জমির জন্য আমার দুই ছেলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল। আমি অপরাধীর শাস্তি চাই।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। জমি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। এ কারণে একভাই আরেক ভাইয়ের ছেলেদের উপর অ্যাসিড ছুড়েছে বলে তারা ধারণা করছে। তারা বলছে রাত তিনটার সময় জানালা দিয়ে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছে। তিনি বলেন, মুল ভিকটিম ঢাকায়। অ্যাসিড কিনা পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে রিপোর্ট কি আসে। সব যাচাই বাছাই করে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ইনচার্জ) পুলিশ পরিদর্শক শফিকুজ্জামান সরকার আজ সকাল ১১ টায় মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে তালিকাভুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
অভিযুক্ত সুমন মিয়া ঘটনার পর থেকে গাঢাকা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি