November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 1st, 2022, 8:00 pm

গাইবান্ধায় এই প্রথম ১ বছরে এক বিচারকের ২৩০৩ মামলা নিষ্পত্তি

ফাইল ছবি

জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধায় এই প্রথম এক বছরে দুই হাজার ৩০৩টি মামলার নিষ্পত্তি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এক বিচারক। গাইবান্ধার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে এসব মামলার নিষ্পত্তি করেন বিচারক উপেন্দ্র চন্দ্র দাস। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকা এ মামলাগুলো নিষ্পত্তি হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা খুশি হয়েছেন। কেননা বছরের পর বছর ধরে আদালতে যাতায়াতে তাদের বহু টাকা ব্যয় হয়েছে। হয়রানী ও ভোগান্তির পাশাপাশি সময়ও নষ্ট হয়েছে। বিচারকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এক বছরে এতোগুলো রায় দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
গাইবান্ধার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের একটি সূত্র জানায়, বিচারক উপেন্দ্র চন্দ্র দাস একাধিক বিচারিক ও আমলী আদালতের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে একই সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত আদালতে এক হাজার ৬০০টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে আদালতে দায়ের হয় ৭৮০টি ও থানায় ৮২০টি মামলা। এ ছাড়া বিচারের জন্য চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে আসে আরও ৮৭৪টি মামলা। এ নিয়ে তাঁর কাছে বিচারের জন্য আসে মোট দুই হাজার ৪৭৪টি মামলা। এরমধ্যে ওই সালে বিচারিক ও আমলী আদালত মিলিয়ে দুই হাজার ৩০৩টি মামলা নিষ্পত্তি করেন তিনি।
সূত্রটি আরও জানায়, নিষ্পত্তিকৃত মামলার মধ্যে দো-তরফা সূত্রে রায় প্রদান করা হয় ৩২৭টি। এজন্য এক হাজার ৮৫৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়। নিষ্পত্তিকৃত মামলার মধ্যে সাজা হয়েছে ১৩৭টি, মাদক মামলায় সাজা হয়েছে ৬০টি। সাজাপ্রাপ্ত ১৩ জন আসামিকে কারাগারে সাজা ভোগের পরিবর্তে সংশোধনের সুযোগ প্রদানের জন্য প্রবেশনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রায় প্রদানকৃত মামলার মধ্যে ১০ বছরের অধিক পুরাতন মামলা রয়েছে ১৭টি এবং ৫ বছরের অধিক পুরাতন মামলা রয়েছে ৬৯টি।
গাইবান্ধা কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, নির্ধারিত দিনে সাক্ষী না আসায় মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয়। কিন্তু এই বিচারকের তাগাদার কারণে আদালতে সময়মত সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে এক বছরে এতো মামলার দ্রুত নিস্পত্তি হয়েছে। ২০২০ সালে দায়েরকৃত অনেক মাদক মামলা তিনি ২০২১ সালেই নিষ্পত্তি করেছেন। বেশি সংখ্যক সাক্ষী উপস্থাপনের জন্য পুলিশ বিভাগ হতে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক পাঁচ দফায় পুরস্কৃতও হয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক মানুষকে বিচারিক সেবা প্রদানের লক্ষে বিশেষ উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে বিচারক জামিনের দরখাস্ত নিষ্পত্তি করেছেন এক হাজার ৫৯০টি, আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি (১৬৪ ধারা) লিপিবদ্ধ করেছেন ৩৩টি, ভিকটিমের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছেন ১১টি, রিমা-ের দরখাস্ত নিষ্পত্তি করেছেন ৩৬টি, অভিযোগ গঠন করেছেন ৪১৬টি মামলায়, মামলা ফাইলিংয়ের জবানবন্দি গ্রহন করেছেন ৭৮০টি, এফিডেভিট সম্পাদন করা হয়েছে ৬৯২টি।
মামলার দ্রুত রায় হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরাও খুশি হয়েছেন। সাদুল্লাপুর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ২০০৯ সালে গাড়ীচাপায় ভাতিজির মৃত্যু হলে মামলা দায়ের করি। দীর্ঘ এক যুগ ধরে মামলা চলার সময় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। নষ্ট হয়েছে বহু সময়। আদালতে যাতায়াতে ভোগান্তি হয়েছে। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারক উপেন্দ্র চন্দ্র দাসের প্রচেষ্টায় দ্রুত মামলার নিস্পত্তি হয়েছে। রায়ে গাড়ীচালকের তিন বছরেরর সাজা হয়েছে। তিনি কারাগারে আছেন। আমি খুশি। একই উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের খাতিজা খাতুন যৌতুক মামলা করেন। রায়ে আসামির দুই বছর সাজা হওয়ায় তিনি খুশি হয়েছেন। তিনি আদালতে হাজিরা দেওয়ার ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, মামলা জটের কারণে বহু মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ২৫ থেকে ৪৫ বছর ধরে মামলা চলমান থাকার নজিরও রয়েছে। এই বাস্তবতায় বিচারক উপেন্দ্র চন্দ্র দাস এক বছরে দুই হাজার ৩০৩টি মামলার নিস্পত্তি করেছেন। যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাড়াতাড়ি রায় হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরাও সন্তুষ্ট হয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি (পিপি) ফারুক আহম্মেদ প্রিন্স বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিচারক উপেন্দ্র চন্দ্র দাস নিরলসভাবে কাজ করেন। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে এক বছরে এতো মামলার নিস্পত্তি গাইবান্ধায় এই প্রথম। তাঁর মত দেশের সব বিচারক আন্তরিক হলে মামলাজট থাকবে না। বিচারপ্রার্থীদেরও ভোগান্তি কমবে। তারিখে তারিখে আদালতে হাজিরা প্রদানের দুর্ভোগ কমবে এবং মামলার ব্যয় কমে যাবে।