April 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, October 15th, 2023, 10:02 pm

গ্যাস অনুসন্ধানে জোরদারে বিদেশী কোম্পানিকে দেয়া হচ্ছে নতুন ব্লক

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জ্বালানি চাহিদা মেটাতে দেশের অভ্যন্তরীণ কূপগুলোতে পুনর্খনন ও অনুসন্ধানে জোর দিচ্ছে সরকার। এই লক্ষ্যে গত বছর থেকে শুরু হয় ৪৬টি কূপে অনুসন্ধান ও ওয়ার্কওভারের কাজ। দৈনিক অন্তত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গ্যাস অনুসন্ধানে শুরু হয় ক্রাশ প্রোগ্রাম। এরই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম, চায়না কোম্পানি সিনোপ্যাক এবং আমেরিকান কোম্পানি শেভরনকে দেয়া হচ্ছে নতুন আরো কয়েকটি ব্লক। ভোলা অঞ্চলে গ্যাজপ্রম আরো অন্তত ৫ টি ব্লকে অনুসন্ধানের কাজ ও উন্নয়ন কার্যক্রম চালাবে।

একই সঙ্গে সিলেট অঞ্চলেও ৫টি ব্লকে অনুসন্ধান, ওয়ার্কওভারের কাজ পেতে যাচ্ছে চায়না কোম্পানি সিনোপ্যাক ইন্টারন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম সার্ভিস করপোরেশন। আর টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলা নিয়ে গঠিত গ্যাস ব্লক-৮ এবং সুনামগঞ্জ, শেরপুর ও ময়মনসিংহ এলাকা নিয়ে গঠিত ১১ নম্বর ব্লক অনুসন্ধানে শেভরনকে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। ইতোমধ্যে এসব কোম্পানিকে নতুন কূপগুলোর কাজ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনও পাওয়া গেছে। শীঘ্রই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হবে। সব মিলিয়ে নতুন বছরে দেশীয় কূপগুলোতে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে আরো গতি আসবে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রায় ৩ বছর আগে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আওতায় ভোলার টবগী-১, ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ কূপগুলোতে ইতোমধ্যে সফল অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করেছে রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় কোম্পানি গ্যাজপ্রম। কোম্পানিটি ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে নতুন করে জরিপ কাজ পরিচালনার পাশাপাশি অনুসন্ধানের কাজও করে। এরইমধ্যে ভোলার ‘ইলিশা’কে ২৯ তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট মজুত গ্যাসের এই ক্ষেত্রটি থেকে ২৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। বর্তমান বাজারদরের পরিপ্রেক্ষিতে এর মূল্য প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যার বেশিরভাগ সাফল্যের দাবিদার গ্যাজপ্রম। গ্যাজপ্রম চলতি বছরের ৯ মার্চ ইলিশা-১ অনুসন্ধান কূপের খনন কাজ শুরু করে ১৪ এপ্রিল কূপের ৩ হাজার ৪৭৫ মিটার গভীরতায় খনন কাজ শেষে পৃথক নতুন একটি বাণিজ্যিকভাবে সফল গ্যাসের স্তর আবিষ্কার করে।

এর ধারাবাহিকতায় সার্বিক ভূতাত্ত্বিক ও ভূপদার্থিক কারিগরি বিশ্লেষণ ও ডিএসটি (ড্রিল স্টেম টেস্ট) করে ইলিশা কূপ স্থাপনাকে দেশের নতুন ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা প্রদানের বিষয়ে বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগ মতামত প্রদান করে। সূত্র জানায়, সিলেট-১০ নং কূপে সফল অনুসন্ধান চালায় চায়না কোম্পানি সিনোপ্যাক ইন্টারন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম সার্ভিস করপোরেশন। গ্যাসফিল্ড কোম্পানির সঙ্গে যৌথ চুক্তির আওতায় সিলেট গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের নিজস্ব অর্থায়নে এই কূপটি খনন করা হয়। দৈনিক অন্তত এক কোটি ঘনফুট গ্যাস এই কূপ থেকে উত্তোলন করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কোম্পানিটি ওই অঞ্চলে আরও ৫টি ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই দুই কোম্পানি অর্থাৎ সিনোপ্যাক এবং গ্যাজপ্রমের মোট ১০টি ব্লকের কাজের জন্য জ্বালানি বিভাগের অনুমোদনের পর এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পর্যন্ত হয়ে গেছে। এখন যেকোনো সময় চুক্তি সম্পন্ন হবে। বাপেক্সের সঙ্গে গ্যাজপ্রমের চুক্তি হবে আর সিনোপ্যাকের সঙ্গে হবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের। তার পরই তারা কাজ শুরু করবে।

সূত্র আরো জানায়, মার্কিন কোম্পানি শেভরন বিশেষ বিধান আইনের আওতায় ব্লক-৮, ব্লক-১১ এবং রশীদপুর গ্যাস ফিল্ড উন্নয়ন প্রস্তাব জমা দিয়েছিল। তবে রশীদপুর গ্যাস ফিল্ড দেয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স ব্লক-৮ এ দ্বিমাত্রিক জরিপ এবং ১১ নম্বর ব্লকের একটি অংশে ত্রিমাত্রিক জরিপ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ১১ নম্বর ব্লকে ২ দশমিক ৪৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে। শেভরন বাংলাদেশ এসব ব্লকে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করবে।

জরিপের ফল ইতিবাচক হলে পরবর্তী ধাপে (কূপ খনন) যাবে কোম্পানিটি। বহুজাতিক এই কোম্পানিটি বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৩টি ব্লক থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে। তাদের হাতে রয়েছে ব্লক-১২ নম্বরে থাকা বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র, ব্লক-১৩ নম্বরে থাকা জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র এবং ব্লক-১৪ নম্বরে থাকা মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র। এর মধ্যে বিবিয়ানা দেশের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র। এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবরে শেভরনের বিবিয়ানা ফিল্ডের নতুন এলাকায় কূপ খনন করতে ত্রিপক্ষীয় সম্পূরক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা ও শেভরন বাংলাদেশ। এই চুক্তির আওতায় শেভরনের বিবিয়ানা ফিল্ডের নতুন এলাকায় ২৭নং কূপ খননের কাজ শুরু করা হয়েছে। এই কূপে সফলতা পেলে নতুন আরও একটি কূপ খনন করতে চায় কোম্পানিটি।

এদিকে জ্বালানি সংকটে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে দেশে ব্যাহত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন। সরকারকে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হয়। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় দেশের মানুষকে। তখনই দেশীয় অভ্যন্তরের কূপগুলোতে নতুন উদ্যমে গ্যাস অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। দেশের জ্বালানি সংকট মেটাতে আরও অন্তত ২৯ টি পরিত্যক্ত কূপে নতুন করে ওয়ার্কওভারের (সংস্কার) কাজ শুরু করার কথা জানায় বাপেক্স। এর বাইরেও ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পেট্রোবাংলার মোট ৪৬ টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খননের পরিকল্পনায়ও এনেছে পরিবর্তন। ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ নাম দিয়ে এসব কূপে অনুসন্ধান, ওয়ার্কওভার, খনন ও উন্নয়ন কাজ শেষ করা হবে ২০২৪ সালের মধ্যেই।

যদি এই প্রোগ্রাম সফলভাবে শেষ করা যায় তাহলে দেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমবে। এদিকে কূপে অনুসন্ধানের বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. শোয়েব জানান, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট চলছে। এর থেকে বের হতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমদানির জন্য নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি দেশীয় কূপগুলো খননেও জোর দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এসব পরিত্যক্ত কূপে নতুন করে অনুসন্ধান কাজ শুরু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও যে ৪৬টি কূপ ২০২২-২৫ সালের মধ্যে নতুন করে খনন, ওয়ার্কওভারের কথা ছিল সেগুলোর সময়ও কমিয়ে এনে একটি ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যেই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দৈনিক অন্তত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করা হয়। গ্যাজপ্রম, সিনোপ্যাক, শেভরনকে নতুন ব্লক দেওয়া এই পরিকল্পনারই অংশ।