নিজস্ব প্রতিবেদক:
গ্যাস প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকের আগ্রহ থাকলেও বিতরণ কোম্পানিগুলোর অনীহা দেখাচ্ছে। আগে যেখানে দুই চুলার জন্য গ্রাহককে প্রতি মাসে ৯৭৫ টাকা গুনতে হতো, সেখানে অনেক গ্রাহকেরই মাসে এখন খরচ হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। ফলে প্রতি মাসে গ্রাহকের প্রায় অর্ধেক টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু প্রিপেইড মিটার বসানোর পর বিতরণ কোম্পানিগুলো বুঝতে পারছে প্রথাগত বিলিং ব্যবস্থার চেয়ে প্রিপেইড মিটারে তাদের আয় কমে যাবে। সেজন্যই গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকের আগ্রহ থাকলেও প্রিপেইড মিটার প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়ন খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। জ¦ালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৭ সালে বাসাবাড়িতে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন শুরু হয়। তবে ২০১১ সালেই পরীক্ষামূলকভাবে প্রিপেইড মিটার বসানো শুরু হয়েছিল। শুরুতে মিটার স্থাপনে সরকারের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বেশ আগ্রহ ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে মিটার স্থাপনে দীর্ঘসূত্রতা শুরু হয়। এখন আবেদন করেও গ্রাহক মিটার পান না। যদিও প্রিপেইড মিটারে গ্যাসের অপচয় রোধ, গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রায় প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্দেশ ছিল দ্রুত সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা। দেশে ৬টি গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ৪৩ লাখ। ৬ বছরে মাত্র দুটি গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ৪ লাখের মতো গ্রাহককে প্রিপেইড সুবিধা দিয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশের বেশি গ্রাহকই ওই সুবিধার বাইরে আছে। ওই হিসাবে বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতি মাসে ৩৯ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ১৬৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বেশি বিল হিসেবে আদায় করছে।
সূত্র জানায়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বিগত ২০১১ সালে পরীক্ষামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ২৮ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৭ আবাসিক গ্রাহক আছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার পেয়েছে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), সরকার ও টিজিটিডিসিএলের অর্থায়নে ওই প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়। একসময় বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাসের স্থানীয় কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রিপেইড মিটার বসানোর তাগাদা দিয়েছে। আর মিটারের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেয়া হতো না। কিন্তু শুরুতে অনেক গ্রাহকই আগ্রহ না দেখালেও এখন বেশির ভাগ গ্রাহকই প্রিপেইড মিটারে আগ্রহী। কিন্তু এখন বিতরণ কোম্পানিগুলোতে আবেদনের পর কয়েক বছর অপেক্ষা করেও গ্রাহকরা মিটার পাচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দুই চুলায় মাসে ৭৭ ঘনমিটার গ্যাসের ব্যবহার ধরে দাম নির্ধারণ করে। তাতে বিতরণ কোম্পানি ৯৭৫ টাকা বিল নেয়। কিন্তু জ¦ালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই চুলার একজন গ্রাহক মাসে গড়ে ৪০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন, যার দাম আসে ৫০৬ টাকা। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের হিসাবের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের হিসাবের মিল পাওয়া যায়।
এদিকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠানটির ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫ জন গ্রাহকের মাত্র ৬০ হাজার জন প্রিপেইড মিটার পেয়েছে। আরো এক লাখ মিটার বসানোর আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আর সিলেট বিভাগে গ্যাস বিতরণ করছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক গ্রাহক আছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৭৫ জন। আর ওই প্রতিষ্ঠান প্রিপেইড মিটার বসানোর জন্য মাত্র প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তাছাড়া ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বাকি ৩টি এখনো প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রমই শুরু করেনি। তার মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহকারী বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬১ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের আবাসিক গ্রাহক এক লাখ ২৮ হাজার ৮৪৬ জন। খুলনা ও বরিশাল বিভাগে গ্যাস সরবরাহ করছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। ওই প্রতিষ্ঠানের আবাসিক গ্রাহক ২ হাজার ৩৭২ জন।
অন্যদিকে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো আবাসিক গ্রাহকদের কাছ থেকে এখন যে রাজস্ব পাচ্ছে, প্রিপেইড মিটার বসানো হলে তাদের প্রায় ৪০ শতাংশ রাজস্ব কমে যাবে। কারণ আবাসিকে গ্যাসের দাম নির্ধারণকালে যে পরিমাণ গ্যাস ধরা হয়েছে, গ্রাহক তার চেয়ে অনেক কম গ্যাস ব্যবহার করে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, আমরা চেয়েছিলাম আগামী দুই বছরের মধ্যে অন্তত ১০ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করতে। তাতে গ্রাহকেরও সুবিধা হবে, গ্যাসও সাশ্রয় হবে। কিন্তু বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনে খুবই অনীহা। তিতাসের বিল দেয়া ও বিল নেয়ার ক্ষেত্রে বিশাল বড় কারচুপি পাওয়া যাচ্ছে। নিরীক্ষায় (অডিট) ওসব কারচুপি বের হচ্ছে। প্রিপেইড মিটারে ওসব কারচুপি করার সুযোগ নেই। ওই কারণেই কোম্পানিগুলোর এত অনীহা।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ