প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের নেতাকর্মীদের গ্রামে গিয়ে ফসল উৎপাদন বাড়াতে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,‘আমি যুবলীগের প্রতিটি কর্মী ও নেতাকে গ্রামে যেতে বলব এবং কোনও জমি যেন অনাবাদি না থাকে তা নিশ্চিত করুন।’
শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন বাংলাদেশ যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মণি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ গঠন করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন,ইউক্রেন যুদ্ধ,নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ববাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। তাই,আমি এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কোভিড-১৯ মহামারিতে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষকদের ফসল তুলতে সাহায্য করেছেন।
তিনি যুবলীগ নেতাদেরও নিজের জমি চাষ করতে এবং অন্যদের জমিতে ফসল ফলাতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন,‘এখন আমাদেরকেও সেভাবে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আপনাদেরকে দেশ ও জনগণের সেবা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে যুবলীগের সদস্যদের কাজ করার আহ্বান জানান। যাতে তরুণরা এ ধরনের সামাজিক ব্যাধি থেকে দূরে থাকে।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক নেতাকর্মীকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য যুবকদের মধ্যেও এ বিষয়ে এমন মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।’
আমাদের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী তাদের সমালোচনা করেছেন যারা আগে ভেবেছিলেন যে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে।
তিনি বলেছিলেন,‘আমাদের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। অনেক মানুষ বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা ভেবেছিল… কিন্তু তাদের মুখে ছাই পড়ে গেছে।’
বিএনপির কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপির নেতা তারেক রহমান অর্থপাচার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলেও এখন অনেক নেতাই অর্থপাচার, লুণ্ঠন ও দুর্নীতির কথা বলছেন।
তিনি বলেন, তারেক জিয়াকে মানি লন্ডারিং মামলায় ৭ বছর কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের নেতা হত্যা, মানি লন্ডারিং, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় অভিযুক্ত তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা শোভনীয় নয়।’
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কোনও দেশ এমন কোনও ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত হয় যিনি অষ্টম শ্রেণি পাশ এবং যিনি ম্যাট্রিক (ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায়) পাশ করতে ব্যর্থ হন। তবে সেদেশটি এগিয়ে যায় না।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপি শাসনামলে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা এখন ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছয় লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
তিনি আরও বলেন, কোনও উন্নয়ন না হলে আমরা এত বড় বাজেট কিভাবে রাখতে পারি?
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিল তাকে স্বাগত জানান।
এরপর পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সমাবেশের সূচনা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি একটি বিশেষ প্রকাশনা উন্মোচন করেন এবং সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে একটি লোগো উন্মোচন করেন। পাশাপাশি যুবলীগের ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে সুবর্ণজয়ন্তী ক্রেস্ট এবং বঙ্গবন্ধুর দু’টি পৃথক চিত্রকর্ম প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু, ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।
শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন মইনুল হোসেন খান নিখিল।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
এলডিসি গ্রাজুয়েশনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু উত্তরণে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘের
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে ইউনূস-আইসিসির আলোচনা
দেশ সংস্কারে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র