জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট উদ্ভাবিত বারি-৮ নামে নতুন জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে আশার আলো দেখছেন সিলেটের চাষিরা। ইতিমধ্যে উন্নত জাতের এই টমেটো চাষে ব্যাপক ফলনও পেয়েছেন তারা। ভালো দাম পাওয়ায় ভাগ্য বদলাচ্ছে তাঁদের।
বারি-৮ টমেটো খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। ফলে তারা দামও পাচ্ছেন ভালো। কৃষকরা বলছেন অধিক ফলন আসায় এ টমেটো চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। তাই আগামীতে আরো বেশি জমিতে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদি, রোগ-প্রতিরোধক উন্নত ফলনশীল এই টমেটোর চাষ খুব দ্রুত সময়েই সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট সারাদেশে মোট ৬ টি টমেটোর জাত নিয়ে ২০২১ সাল থেকে কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে। এর মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, হবিগঞ্জের মাধবপুর এবং মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, জুড়ি, কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেই ১৫০ বিঘা জমিতে বারি-৮ ও ১১ নামে উন্নত জাতের এই টমেটোর চাষ করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক চাষের প্রথম মৌসুমেই ব্যাপক ফলন পেয়েছে এখানকার কৃষকরা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রাস্তার দুই ধারে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে এসব টমেটো ক্ষেত। প্রতিটি ক্ষেতই পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। পলিথিনের ঢাকা এসব শেডের নিচের গাছগুলোতে থরে থরে ঝুলে রয়েছে সবুজ ও লাল রঙের টমেটো। কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণ টমেটোর ফলন এসেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার শুকুরুল্লাগাঁও গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, আগে তিনি এই মাঠে অন্য জাতের টমেটো চাষ করতেন। এবছর তারা সিলেট আঞ্চলিক কৃষি গবেষণার বিজ্ঞানীদের সার্বিক সহযোগিতায় বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করেছেন। প্রথম মৌসুমেই তারা ব্যাপক ফলন পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
জামিরকোণা গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, এ বছর বৈরী আবহাওয়ার জন্য অন্য ফসলের দিকে মনোযোগ হতে পারেননি। তবে টমেটো চাষে ব্যাপক লাভের আশা করছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বারি-৮ টমেটোর ফলন অন্যান্য জাতের চেয়ে ফলন প্রায় দ্বিগুন। প্রতিটি গাছে ৩০/৪০ টি ফল ধরে এবং গাছপ্রতি ফলন হয় প্রায় ১৫ কেজি।
তিনি বলেন, অন্যান্য টমেটোর গড় ওজন ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম ওজন হলেও নতুন এ জাতের টমেটোর গড় ওজন ৫০ গ্রামেরও বেশি। এছাড়া চারা লাগানোর মাত্র ৬০ দিনের মধ্যেই ফল পাকতে শুরু।
নরেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, মাত্র এক শতক জমিতে বারি টমেটো-৮ চাষ করে উৎপাদন করে যে লাভ করা সম্ভব তা অন্য জাতের টমেটো চাষে সেটি সম্ভব হয়না। এছাড়া এই টমেটোর জাতটি অনেকটা বেশি রোগ প্রতিরোধক। গ্রীষ্মকালে ফল ধারণের জন্য হরমোন প্রয়োগ না করলেও চলে। তিনি বলেন, এসব কারণে তারা বারি টমেটো-৮ চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। তবে হরমোন প্রয়োগ করলে ফলন বেশি হয় বলে তিনি জানান।
মৌলভীবাজারের বৈজ্ঞানিক সহকারী মোঃ আখলাকুর রহমান বলেন, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট সিলেট এর বাস্তবায়নে এবং বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর অভিযোজন পরীক্ষা, উৎপাদন ও কমিউনিটিবেসড পাইল প্রডাকশন প্রোগ্রাম শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় কমলগঞ্জে বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ এবং ১১ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিএআরআই এর পক্ষ থেকে বীজ সহ সার, কীটনাশক ও হরমোন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষকরা হাইব্রিড টমেটো চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলন দেখে ইতিমধ্যে বেশ আশাবাদী কৃষকরা।
সিলেট আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগের ৫টি উপজেলার ১৫০ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক বারি টমেটো-৮ চাষ করা হয়। এসব কৃষকদের এ টমেটো চাষের জন্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বীজ, সার, কীটনাশক ও হরমোন দেয়া হয়। কৃষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ টমেটো চাষে দক্ষ করা হয়।
তিনি বলেন, অন্যান্য জাতের চেয়ে এ টমেটোর আকার বড় ও কালার হওয়ায় তারা বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন। তিনি বলেন, গ্রীষ্মের আবহাওয়ার
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি