May 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 5th, 2023, 7:52 pm

জাপানে মানুষের একাকিত্ব দূর করছে রোবট

অনলাইন ডেস্ক :

রোবট কি মানুষের চাকুরি খেয়ে নিচ্ছে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের এই যুগে প্রশ্নটি আরো গুরুত্ব পাচ্ছে। জাপানে এক ক্যাফেতে রোবট কাজে লাগিয়ে মানুষের একাকিত্ব দূর করার এক অভিনব প্রকল্প নজর কাড়ছে। জাপানের রাজধানী টোকিওর ‘ডন ক্যাফে’ দেখতে সাধারণ রেস্তোরাঁর মতোই। কিন্তু কফি প্রস্তুতকারক ও পরিচারকদের পাশাপাশি সেখানে রোবটও কাজ করে। কয়েকটি রোবট চেয়ারে বসে অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করে। কয়েকটি আবার অর্ডার করা খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত। রেস্তোরাঁর অতিথিরা রোবটগুলোর সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে চান।

মানুষের মতো দেখতে অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রমানবগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কোনো প্রযুক্তি নেই। এই রোবট আসলে এমন মানুষের অবতার, যারা দূর থেকে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করেন। রোবটের চোখে বসানো ক্যামেরা, স্পিকার ও মাইক্রোফোনের কল্যাণে তথাকথিত পাইলটরা অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে পারেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এই পাইলটরা শুধু বাসা অথবা হাসপাতালের ঘর থেকে কাজ করতে পারেন। মায়া তাদেরই একজন। এক রোগের কারণে তাকে এখন হুইলচেয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়।

২৪ বছর বয়সি সেই নারীর কাছে কোনো চাকরি না পাওয়া অত্যন্ত কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিল। ‘ডন ক্যাফে’-তে কাজ পেয়ে তার জীবনটা বদলে গেল। নিজের অতীত তুলে ধরে মায়া বলেন,‘আমি অনেক চাকুরির আবেদন করেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর কোনো সুযোগ পাইনি। তখন খুব দুঃখ ও অবসাদ হয়েছিল। ভেবেছিলাম, কোনোদিন কাজ করতে পারবো না।

তখনই পাইলটের এই চাকুরির খবর পেলাম। সেটা সত্যি অসাধারণ। আমার কাছে সেটা ছিল শেষ আশার আলো। অতিথিদের মনোরঞ্জন হলে, পরের বারও দেখা হবে কিনা, এমন প্রশ্ন শুনলে আজ আমি কৃতজ্ঞ বোধ করি। আমি মানুষকে কোনোভাবে সাহায্য করছি, সেটা জানতে পেরে আমার খুব আনন্দ হয়।’ ইয়োশিফুজি এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা। তিনি অরি ল্যাবোরেটরি নামের কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার। এই কোম্পানি ক্যাফের ওরিহিমে রোবট তৈরি করে।

ছোটবেলা থেকেই ইয়োশিফুজি একাকিত্বের সমস্যায় ভুগতেন। স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণে অনেক বছর তিনি ক্লাসে যেতে পারেননি। কেন্তারো বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর আমি স্কুলে যেতে পারিনি। সব সময়ে মনো হতো, অন্য একটা শরীর পেলে কী ভালোই না হতো! কারণ চোট পেলে বা হাসপাতালে ভর্তি হলেও অন্য একটি শরীরের কল্যাণে সামাজিক জীবনে অংশ নিতে পারতান। কেন্তারো ইয়োশিফুজি নতুন প্রযুক্তির সামাজিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন,‘আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কাজে লাগিয়ে আমাদের কাজ আরো দক্ষভাবে করা বা কর্মীর সংখ্যা কমাতে চাই না। বরং শয্যাশায়ী হয়ে পড়লে বা শরীর নড়াচড়া না করতে পারলেও যাতে আমরা কাজের জায়গা পেতে পারি, সেটাই হলো লক্ষ্য।’

এই প্রথম বার ডন ক্যাফেতে এসেছেন। সেখানকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। কোনো প্রত্যাশাও ছিল না। কিন্তু তার দ্রুত রোবটের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস হয়ে গেছে। রেই বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা দারুণ প্রকল্প। আশা করি, ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এটিকে একটা সূচনার জায়গা হিসেবে আমরা কাজে লাগাতে পারি।

মানুষ ও রোবটের মধ্যে যে সংযোগ তৈরি হয়েছে, তা সত্যি হৃদয় ভরিয়ে দেয়।’ শারীরিক প্রতিবন্ধী বা ক্রনিক রোগীদের প্রায়ই সামাজিক মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। সমালোচকদের মতে, সরাসরি অথবা অবতারের মাধ্যমে তাদের আরো বেশি অংশগ্রহণ স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। সেটা সম্ভব হয়ে ওঠা পর্যন্ত ডন ক্যাফের রোবটগুলি একাকিত্ব কমিয়ে যাচ্ছে। পাইলট ও গ্রাহক – দুই পক্ষই এর সুফল পাচ্ছেন।