November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 30th, 2022, 8:53 pm

টাঙ্গাইলে সাড়ে ৪’শ প্রধান, সাড়ে ৮’শ সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য

ফাইল ছবি

মামুন হায়দার, টাঙ্গাইল:

টাঙ্গাইল জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি হাজার হাজার শিশু কিশোর। যে সকল বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই সেই সব বিদ্যালয়ে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা হয়েছে। এতে করে বিপুল সংখ্যক সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া মামলা জনিত কারণে ৩০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে এক হাজার ৬২৩টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছে এক হাজার ১৭৩ জন। ৪৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে মির্জাপুরে ৮টি, কালিহাতীতে ৯টি ও নাগরপুরে ১৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় সেখানে সিনিয়র সহকারি শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ হিসেবে জানা গেছে, জাতীয়করণ বিদ্যালয় থেকে যে সকল সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন অথচ জাতীয়করণের সময় প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাদের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয় নাই এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে বেতনস্কেল প্রদান করা হয়নি সেই সেকল সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দাবিতে আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করার কারণে ওইসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
জেলায় সহকারি শিক্ষক রয়েছেন আট হাজার ৪৫৯ জন। কর্মরত রয়েছেন সাত হাজার ৬১৫জন। ৮৪৪টি সহকারি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। জেলার ঘাটাইল উপজেলায় প্রধান শিক্ষক পদে ১৭২ জনের মধ্যে রয়েছেন ৮২জন। ৯০ জনের পদ শুন্য রয়েছে। সহকারি শিক্ষক পদে ৯১৬ জনের মধ্যে রয়েছে ৮২৭ জন। শুন্য রয়েছে ৮৯টি পদ। সখীপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৪৭ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১৩২ জন। ১৫টি পদ শূন্য রয়েছে। সহকারি শিক্ষক পদে ৭০৮ জনের মধ্যে রয়েছেন ৬৫১জন। শূন্য রয়েছে ৫৭টি পদ। গোপালপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৬১জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১১২জন। শূন্য রয়েছে ৪৯ জনের পদ। সহকারি শিক্ষক পদে ৭৫৯ জনের মধ্যে রয়েছে ৬৪৭জন। ৮৮ জনের পদ শূন্য রয়েছে। বাসাইলে প্রধান শিক্ষক পদে ৭৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৬৬জন। শূন্য রয়েছে ১৩টি পদ। সহকারি শিক্ষক পদে ৪৩৫ জনের মধ্যে রয়েছেন ৩৮৩জন। ৫২টি পদ শূন্য রয়েছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় প্রধান শিক্ষক পদে ১৬৩টি পদের মধ্যে রয়েছেন ১৩২জন। শূন্য রয়েছে ৩১জনের পদ। সহকারি শিক্ষক পদে ৮৭৩টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৮৩৪জন শিক্ষক। সেখানে ৩৯ জনের পদ শূন্য রয়েছে। দেলদুয়ারে প্রধান শিক্ষক পদে একশ জনের মধ্যে রয়েছেন ৭২জন। শূন্য রয়েছে ২৮ জনের পদ। সহকারি শিক্ষক পদে ৫২৯টি পদের মধ্যে রয়েছেন ৪৭১জন। ৫৮টি পদ শূন্য রয়েছে।
মির্জাপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৭০জনের মধ্যে রয়েছেন ১৪৭জন। ২৩জনের পদ শূন্য রয়েছে। সহকারি শিক্ষক পদে ৯৪২ জনের মধ্যে ৮৫৩জন কর্মরত রয়েছেন। ৮৯টি পদ শূন্য রয়েছে। কালিহাতী উপজেলা প্রধান শিক্ষক পদে ১৭০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৯০ জন। শূন্য রয়েছে ২৯জনের পদ। সহকারি শিক্ষক পদে ৯১৪ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৮৪২ জন। সেখানে ৭২টি পদ খালি রয়েছে। মধুপুরে প্রধান শিক্ষ পদে ১১০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৯০ জন। খালি রয়েছে ২০টি পদ। সহকারি শিক্ষক পদে ৫৪৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৪৬৯জন। শূন্য রয়েছে ৮০টি পদ। নাগরপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৫৬জনের মধ্যে রয়েছেন ১১০জন। ৪৬টি পদ শূন্য রয়েছে। সহকারি শিক্ষক পদে ৮২৯জনের মধ্যে রয়েছে ৭১৪জন। ১১৫ টি পদ শূন্য রয়েছে। ভুঞাপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১১০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৮২ জন। শূন্য রয়েছে ২৮জন। সহকারি শিক্ষক পদে ৫৯৮ জনর মধ্যে রয়েছেন ৫২৮জন। ৭০ জনের পদ শূন্য রয়েছে। ধনবাড়ী উপজেলায় প্রধান শিক্ষক পদে ৮৫ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৫৮জন। শূন্য রয়েছে ২৭জনের পদ। আর সহকারি শিক্ষক পদে ৪০৭ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩৭২ জন। ৩৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
নাগরপুর উপজেলার ভারড়া ইউনিয়নের মিরকুটিয়া রিয়াজ তালুকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ওই স্কুলে সহকারি শিক্ষক রয়েছেন চারজন। চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারি শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, প্রশাসনিক নানা কাজে প্রায় সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ব্যাহত হয় পাঠদান।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান খোশনবীশ জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক শূন্যতার কারণে মানসম্মত পাঠদানে ব্যঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান ও কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। এছাড়াও নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতি মাসেই প্রধান ও সহকারী শিক্ষক শূন্য পদের তালিকা মন্ত্রণাালয়ে পাঠনো হয়। দীর্ঘদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। যারা চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক পদে রয়েছেন তাদের পদোন্নতি দিয়ে ওই পদ পূরণ করা হবে। এছাড়াও দ্রুত সময়ের মধ্যে সহকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শূন্য পদ পূরণ করা হবে।