নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা ওয়াসার নতুন পানি শোধনাগার থেকে আশানুরূপ পানি উৎপাদন হচ্ছে না। পাশাপাশি মেরামত খরচও হচ্ছে বেশি। অথচ অপেক্ষাকৃত অনেক কম ব্যয়ে স্থাপিত পুরোনো প্রকল্প থেকে বেশি পানি উৎপাদনের পাশাপাশি পরিচালন ব্যয়ও অনেক কম। বিগত ২০০২ সালে চালু হওয়া ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার-১ এবং ২০১২ সালে চালু হওয়া সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার-২ থেকে ২০১৯ সালে চালু হওয়া পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের খরচ, পরিচালন ব্যয় বেশি হলেও পানি উৎপাদন অনেক কম। নতুন প্রকল্পের এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বশীল কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়। ঢাকা ওয়াসা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার সায়েদাবাদ ফেজ-১ ও ফেজ-২ নির্মাণে ডেনমার্কের দাতা সংস্থা ড্যানিডা সহযোগিতা করেছিল। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারেরও বিনিয়োগ ছিল। ওই দুই প্রকল্পেই মানসম্মত কাজ হয়েছিল এবং দুর্নীতির অভিযোগও ছিল না। ফলে ওই দুই শোধনাগার থেকেই বেশি পানি উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে হয়। ২০ বছরের পুরোনো সায়েদাবাদ ফেজ-১ থেকে এখনো প্রতিদিন সাড়ে ২২ কোটি লিটার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২১ কোটি লিটারেরও বেশি পানি পাওয়া যাচ্ছে। পানি উৎপাদনের পারফরম্যান্স প্রায় ৯৪ শতাংশ। কিন্তু ২০১৯ সালে চালু হওয়া পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের উৎপাদনের পারফরম্যান্স মাত্র ৬০ শতাংশ। ওই প্রকল্পে চীনা এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিয়েছিল। ওই প্রকল্পে সাড়ে ৩শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালককে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) হাজিরা দিতে হয়েছে।
সূত্র জানায়, সায়েদাবাদের দুটি পানি শোধনাগার স্থাপনে ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তার মধ্যে সায়েদাবাদ ফেজ-১ স্থাপনে ব্যয় হয় ৬৫৭ কোটি টাকা এবং ফেজ-২ স্থাপনে ব্যয় হয় ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। ওই দুই শোধনাগার থেকে প্রতিদিন ২৫ কোটি করে মোট ৫০ কোটি লিটার পানি পাওয়ার কথা। বিপরীতে ফেজ-১ থেকে পাওয়া যাচ্ছে ২১ কোটি ১০ লাখ লিটার আর ফেজ-২ থেকে পাওয়া যাচ্ছে ২১ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি। আর পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার স্থাপনে ওয়াসার ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। সেখানে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৭ কোটি ৩৬ লাখ লিটার। সায়েদাবাদের পানি শোধনগার দুটি পুরোনো। ২০২১-২২ অর্থবছরে সায়েদাবাদ ফেজ-১-এর পরিচালন বা রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ৭ লাখ টাকা আর ফেজ-২-এর খরচ হয়েছে ৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ওই দুই প্রকল্পের মোট পরিচালন ব্যয় ৬১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। কিন্তু পদ্মা-জশলদিয়া নতুন পানি শোধনাগার প্রকল্প হলেও সেটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হয়েছে ৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। যা সায়েদাবাদের দুই প্রকল্পের মোট পরিচালন ব্যয়ের চেয়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা বেশি। ২০ বছর আগে চালু হওয়া সায়েদাবাদ ফেজ-১-এর বর্তমান পারফরম্যান্স ৯৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ১০ বছর আগে চালু হওয়া ফেজ-২-এর পারফরম্যান্স ৯৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কিন্তু মাত্র তিন বছর আগে চালু হওয়া পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগারের পানি উৎপাদন করার পারফরম্যান্স ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, যে কোনো প্রকল্প চালুর সময় পারফরম্যান্স ভালো থাকে। প্রকল্পের বয়স যত বাড়তে থাকে পারফরম্যান্সও ততই কমতে থাকে। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বাড়তে থাকে। কিন্তুপদ্মা-জশলদিয়া প্রকল্পটি সঠিক ও স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় আশানুরূপ পানি উৎপাদন না হওয়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। তাছাড়া ৭০০ কোটি টাকায় স্থাপিত সাভারের ভাকুর্তা পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন পানি পাওয়ার ২০ কোটি লিটার কথা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৫ কোটি লিটার।
এদিকে এ প্রসঙ্গে পদ্মা-জশলদিয়া প্রকল্পের পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মা-জশলদিয়া প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ঠিক আছে। কিন্তু ওই পানি ঢাকা শহরে সরবরাহ করার মতো পাইপলাইন তৈরি হয়নি। সেজন্য পূর্ণ মাত্রায় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। নতুন প্রকল্পের মেশিনগুলো সব চালু না থাকলেও সেগুলো নিয়মিত ওভারহোলিং করতে হয়। তাছাড়া পদ্মা-জশলদিয়া প্রকল্পের মেশিনগুলো বড় বড়। সেজন্য পরিচালন ব্যয় বেশি হতে পারে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক